রঞ্জু খন্দকার, রাজশাহী থেকে : আপনি ভোজনরসিক, রাজশাহী নগরেও গিয়েছেন, অথচ একবার হলেও কালাই-রুটি পাতে নিয়ে বসেননি– দুঃখিত, আপনার জন্য আফসোস হচ্ছে।
কালাই-রুটি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও তা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহী নগরে।
বর্তমানে রাজশাহী নগরে কালাই-রুটির অন্তত ১০০টি দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানগুলোর নামও বেশ চমৎকার। কালাইঘর, কালাইবাড়ি, হাঁরঘে কালাই–এমন বাহারি সব দোকান রয়েছে নগরীর মোড়ে-মোড়ে। সকাল থেকে রাতদুপুর অবদি খোলা থাকে এসব দোকান।
গত ২ অক্টোবর রাতে কালাইবাড়ি গিয়ে দেখা যায়, গনগনে উনুনে গরমাগরম তৈরি হচ্ছে কালাই-রুটি। গরম থাকতেই সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে প্লেটে-প্লেটে। মুহূর্তেই তা চালান হচ্ছে ক্রেতাদের পেটে। এখানে কেউ কালাই-রুটি খাচ্ছেন মরিচ-পেঁয়াজকুচি আর বেগুন ভর্তা দিয়ে। কেউ নিচ্ছেন হাঁসের মাংস, গরুর ভূঁড়িভাজি ও মাংসভুনা। তবে হাঁসের মাংস দিয়ে কালাই-রুটি খাওয়ার লোকের সংখ্যাই এখানে বেশি।
কারিগরেরা জানালেন, মাসকলাইয়ের ডাল আর আতপ চালের আটা দিয়ে তৈরি হয় এই কালাই-রুটি। দুটি রুটি তৈরি করতে আনুমানিক আড়াই শ গ্রাম কলাই আর এক শ গ্রাম চালের আটা লাগে। রুটির একটা পাশ হয় নরম। আরেকপাশ হয় কুড়মুড়ে। কালাই-রুটির প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে তা গরম অবস্থায় খেতে হবে।
দেখা গেল, দোকানের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় অনেকে বাইরেও টেবিলে বসেছেন কালাই-রুটির অপেক্ষায়। কেউ পরিবার নিয়ে এসেছেন। কেউবা দলবেঁধে এসেছেন বন্ধুদের নিয়ে।
কথা হলো আরাফাত ইসলাম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি এসেছেন ঢাকা থেকে। তিনি বললেন, এর আগেও একবার তিনি রাজশাহী এসেছিলেন। সেবারও কালাই-রুটি খেয়ে গেছেন। সেই স্বাদ নিতে এবারও এসেছেন।
কালাইবাড়ি দোকানটির মালিক আব্দুস ছাত্তার। স্ত্রীকে নিয়ে দোকান চালান তিনি। কারিগর রয়েছেন তিনজন। ওয়েটার রয়েছেন আরও পাঁচজন।
আব্দুস ছাত্তার বললেন, তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কালাই-রুটির ব্যবসা করেন। রাত দেড়-দুইটা পর্যন্ত তাঁর দোকান খোলা থাকে। নগরের স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা লোকজন তাঁর গ্রাহক।
কালাইবাড়ির সত্ত্বাধিকারী আরও জানালেন, রাজশাহীতে আগে কালাই-রুটির ব্যবসা এত জনপ্রিয় ছিল না। এখন দোকান বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তবু ব্যবসা হচ্ছে। কারণ, কালাই-রুটির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে সমানতালে।
কালাইবাড়ির কর্মীরা জানালেন, এখানে প্রতিটি রুটির দাম ৩০ টাকা। স্পেশাল রুটি রয়েছে ৫০ টাকা দরে। সঙ্গে ভর্তা, ভাজিসহ অন্য খাবারের দাম দিতে হবে।
রাজশাহীর কয়েকজন স্থায়ী বাসিন্দা বললেন, কালাই-রুটি চাঁপাইসহ এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার। আগে গেরস্তবাড়িতে সকালের নাশতা হিসেবে খাবারটি বানানো হতো। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় তা ব্যবসায়ীকভাবে তৈরি করা শুরু হয়। এখন এ নগরে বাইরে থেকে কেউ বেড়াতে এলে কালাই-রুটি মুখে দিয়ে যান-ই। এই স্বাদ না নিয়ে গেলে তাঁকে দুর্ভাগাই বলতে হবে।
আকিব জাভেদ শিশির নামে একজন স্থানীয় ফিটনেস ট্রেইনার জুমবাংলাকে বলেন, কালাই-রুটি দিয়ে এখন রাজশাহীতে অতিথি আপ্যায়নও করা হয়। মেয়র, পুলিশ কমিশনার, ডিসি ও এসপি’র বাসায় বাইরের কোনও অতিথি এলে সেখানে কালাই-রুটি বানিয়ে খাওয়ানো হয়। এছাড়া, বড় অনুষ্ঠানে অন্যান্য খাবারের সাথে কালাই-রুটি যেন মূল অনুসঙ্গ হয়ে গেছে।
কয়েকবছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও রাজশাহী এসে পুষ্টিকর ও মুখরোচক এই কালাই-রুটির স্বাদ নিয়ে যান। এই বিশেষ খাবারের কারণে তিনি রাজশাহী শহরকে ভালোবেসে ফেলেছেন বলে সেময় মন্তব্য করেছিলেন। কালাই-রুটি খাওয়ার জন্য হলেও তিনি রাজশাহী শহরে আবার আসতে চান বলেও জানিয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।