জুমবাংলা ডেস্ক: বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর মতো ভুল আর করা যাবে না। সে জন্য তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক হতে হবে।’
আজ (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ নতুন প্রজন্মকে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার তাগিদ দেন।
ডা. জাফর ইকবাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে একটা সত্যিকারের রেনেসাঁ, একটা সংস্কৃতি বলয় গড়ে উঠেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, আগের সেই সাম্প্রদায়িকতা, হানাহানি আর ফিরে আসবে না। কিন্তু কিছুদিন পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করলো, মুক্তিযুদ্ধে কি এত মানুষ মারা গেছে? রাজাকারদের গাড়িতে মন্ত্রীর পতাকা তুলে দেওয়া হলো। আমাদের আর এমন ভুল করা চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যে বাংলাদেশ তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা বাস্তবায়নের জন্য তরুণ প্রজন্মকে সম্প্রীতির বাংলাদেশের চেতনাকে ধারণ করতে হবে।’
গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্য বক্তার মধ্যে ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে সম্প্রীতি বারবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখনও ধর্মের নামে কখনও রাজনীতির নামে। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের এলেই আমরা ভয়ে থাকি। নির্বাচনের আগে ও পরে যে সহিংসতা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার শিকার হয় সংখ্যালঘুরা।’
এই জাতির সব অর্জন অসাম্প্রদায়িকতার ওপর ভর করে হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাজনীতি যাই হোক, সরকার যেই হোক– দেশের হাজার বছরের সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে। কারণ, আমাদের এই জাতির সব অর্জন অসাম্প্রদায়িকতার ওপর ভর করে হয়েছে। সম্প্রীতি নষ্টের পেছনে রয়েছে মৌলবাদিরা। বিভিন্ন সময় সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সামনের নির্বাচনে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, পৃষ্ঠপোষকতাকারী নির্বাচনে এলে পরিবেশ নষ্ট হবে।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের মূল চিন্তা ছিল অসাম্প্রদায়িকতা। এ কারণে আওয়ামী মুসলিম লীগের মুসলিম বাদ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এই বাংলাদেশ কোনও ধর্মের নয়, যারা দেশকে ভালোবাসবে তাদের। এই নীতির ওপরেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমাদের সভা-সেমিনার করতে হচ্ছে।’
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. ফারজানা মাহবুব বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নারীর অধিকার না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তৃণমূলের ছড়িয়ে দিতে না পারলে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এ দুটো জিনিস বাংলাদেশের সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। এরপর থেকেই ধর্মকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যাখ্যা দিয়ে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে ৭১-কে আমরা রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে প্রমিথিউসের মতো দাঁড় করাতে পারিনি বলে আজকের এই সংকট। আমারা সম্প্রীতির বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনও ঠাঁই নাই। এ অবস্থায় আমরা যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।