জুমবাংলা ডেস্ক: রাজারবাগ পীর সায়্যেদ দিল্লুর রহমানের কারসাজিতে ৪৬ মামলার আসামী হয়ে ১০ বছর ধরে কারাবন্দি রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের।
জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত সাংবাদিক জামিউল আহসান সিপু’র করা একটি প্রতিবেদনে পীরের কারসাজির এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর শান্তিবাগের ১০৭ নম্বর পৈতৃক বাড়িতে একরামুল আহসান কাঞ্চন সপরিবারে থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল তার সংসার। হঠাত্ করে একটি সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় ঘাড়ের ওপর ভর করে নতুন আরেকটি মামলা। এভাবে একটি, দুটি কিংবা ১০টি নয়, একে একে ৪৬টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে দুধের শিশুকে বুকে নিয়ে মামলার জালে জড়িয়েছেন হতভাগ্য বাবা, সেই শিশু এখন কৈশোরে পা দিয়েছে। তার যে একজন বাবা আছে, সেটিও বিশ্বাস করতে চায় না ছেলে এনামুল আহসান। কারণ যখন থেকে এই শিশু বুঝতে শিখেছে, তখন থেকেই তো বাবা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
কাঞ্চনের স্ত্রী তামান্না আকরাম জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঞ্চনের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে মামলার শুনানি, সেখানকার কারাগারই হয় তার আবাসস্থল। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৬টি সাজানো মামলা হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও মানব পাচারের মতো ভয়ংকর অপরাধের সাজানো মামলার আসামি বানানো হয়েছে তাকে। একটি মামালায় জামিন নিলে আরেকটি মামলা হাজির হয় তার বিরুদ্ধে। ১৮ বছরের বিবাহিত জীবনের মাত্র আট বছর স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে পেরেছেন, বাকি ১০ বছর কারাগারেই কেটেছে স্বামী কাঞ্চনের।
গত ১৫ বছরে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪৬টি মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনি ২৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। নথি থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে গরুর চামড়া ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মতিঝিলের মুহম্মদ শাকেরুল কবির নামে এক ব্যক্তি মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একরামুল হক কাঞ্চন ও বাবু ওরফে গোইয়াল্লা বাবুকে আসামি করে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চকোরিয়ার আশা বেগম মানব পাচারের মামলা করেন আকরামুল আহসান কাঞ্চন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলম মিয়ার বিরুদ্ধে।
কাঞ্চনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘একটি চক্র কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাজানো মামলা করে। আমি নিজে ১০-১২টি মামলায় তাকে জামিন করিয়েছি।’
যে কারণে এত মামলা :কাঞ্চনের স্ত্রী তামান্না আকরাম বলেন, তার শাশুড়ি কামরুন নাহার, ভাসুর আক্তার-ই-কামাল, ননদ ফাতেমা বেগম ও তাদের মামাতো ভাই শাকেরুল কবির রাজারবাগ পীর সাহেবের মুরিদ। ১৯৯৫ সালে তার শ্বশুর ডা. আনোয়ারুল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার শাশুড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি জমি রাজারবাগ পিরের নামে দান করেন। এছাড়া তার শাশুড়ি পিরসাহেবের মেয়ের বিয়েতে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার উপহার দেন। ২০০৪ সালের দিকে তার শাশুড়ি ও ভাসুর (স্বামীর বড়ো ভাই) শান্তিবাগের বাড়িটি পির সাহেবের নামে দান করতে চান। তখন তার স্বামী ও তাদের ছোটো ভাই কামরুল আহসান বাধা দেন। এ নিয়ে তার শাশুড়ি ও ভাসুর পির সাহেবের কাছে অভিযোগ দেন। এরপর থেকে পির সাহেব ও তার চার ভাই এবং তাদের মুরিদদের দিয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে একের পর এক মামলা দায়ের করতে থাকেন। দেবরের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে দেবর এখনো আত্মগোপন করে আছেন। স্বামী জেলে যাওয়ার পর তিনি শান্তিনগরের শ্বশুরের ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।