জুমবাংলা ডেস্ক : করোনার গতি রোধে প্রথম এলাকা হিসেবে জনবহুল পূর্ব রাজাবাজারকে রেড জোন ঘোষণা করে প্রশাসন। গত ১০ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন চলছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের এ এলাকায়।
লকডাউনে থাকা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ক মাসুদ হোসেন সুমন নিজের অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, রাত পৌনে ১টায় ফোন করে এক নারী বললেন তার দুটি ওষুধ প্রয়োজন। তিনি ওষুধের নাম এসএমএস করে পাঠালেন। জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় তখনই এক স্বেচ্ছাসেবীর হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে ফার্মেসিতে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর সে ফোন করে বলল, দেশি ও ভারতীয় দুই প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধ পাওয়া যায় কোনটা নেবেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধার্থে আমি দাম জিজ্ঞেস করায় তিনি জানালেন ৬০ টাকা। আমি অবাক হলাম, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হলেও দাম বেশ কম। কী মনে হতে বললাম, আচ্ছা এটা কীসের ওষুধ? তিনি ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে শুনে যা জানালেন, তাতে আমি হতভম্ব। সেটি ছিল ব্রণ নিরাময়ের ক্রিম! পরে তা পৌঁছে দিয়েছি।’
সুমন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। এখন তিনি করোনা সংক্রমণের ‘রেড জোন’ ঘোষিত পূর্ব রাজাবাজারে জরুরি সেবা, মানবিক সহায়তা ও নিত্যপণ্যের সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ের দেখভাল করছেন।
সুমন বলেন, ‘আমরা হ্যান্ডমাইকে এলাকাবাসীকে অনুরোধ করছি, একটি সুঁইও যদি লাগে আমাদের বলুন, আমরা বাসায় পৌঁছে দেব। তবুও ঘরে থাকুন প্লিজ। আমাদের ১৪৫ জন নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবক প্রায় ২৪ ঘণ্টাই পালা করে কাজ করছেন। তবুও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এর মধ্যে কিছু মানুষ জরুরি সেবার জন্য দেওয়া ফোন নম্বরে এমন উদ্ভট আবদার করছেন যে, শুনে হাসব না কাঁদব- তা বুঝে উঠতে পারি না।’
তিনি জানান, ১৩ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজাবাজারের এক বাসিন্দা ফোন করে বলেন, তার ব্রয়লার মুরগি লাগবে। তাকে বোঝানো হলো, ওই সময় মুরগি পাওয়া মুশকিল। তিনি তার জায়গায় অনড়। পরে পরিচিত এক মুরগি বিক্রেতাকে ডেকে দোকান খুলিয়ে তার কাছে মুরগি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মধ্যবয়সী এক নারী ফোন করে দুই কৌটা হাকিমপুরী জর্দা চান। তার প্রয়োজন খুব তীব্র রাতেই লাগবে। যথারীতি তাকে জর্দা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন বলেন, তার গার্লিক পিজা দরকার, এখনই ব্যবস্থা করতে হবে। পরে অন্য এলাকা থেকে পিজা এনে তাকে সরবরাহ করা হয়।
এদিকে ফেসবুকেও বিভিন্ন সহায়তা চেয়ে পোস্ট দেন অনেকে। গত ১১ জুন তেমনই একটি ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে মেয়রের দপ্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবীদের জানানো হয়। সেখানে এক তরুণী লিখেছেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে তার ওষুধ ও খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।’ ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। সেই নম্বরে কল করা হলে ওই তরুণী এলোমেলো কথা বলে তার মাকে ফোনটি ধরিয়ে দেন। স্বেচ্ছাসেবী জানতে চান, তার কী সহায়তা প্রয়োজন? জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন চালের দাম কত, পেঁয়াজ আধা কেজি নিলে কত দাম হবে, এক পিস গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট দেওয়া যাবে কিনা?’ স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, তারা মানবিক সহায়তা দেন। তবে দরকার হলে পণ্য কিনেও পৌঁছে দিতে পারবেন। তখন সেই নারী বলেন, বাজার লাগবে কিনা তিনি এখনও নিশ্চিত না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।