রাশিয়ার জ্বালানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা থেকে হাঙ্গেরিকে অব্যাহতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার ফলে দেশটি মস্কোর কাছ থেকে তেল-গ্যাস আমদানি চালিয়ে যেতে পারবে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে, তিনি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানকে রাশিয়ার তেল কিনতে অনুমতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন। অরবান ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত এবং তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
শুক্রবার হোয়াইট হাউজে অরবানের সফরকালে ট্রাম্প বলেছিলেন, অন্যান্য অঞ্চল থেকে তেল ও গ্যাস পাওয়া তার (অরবানের) পক্ষে খুবই কঠিন’ বলে একটি ছাড় দেওয়া হতে পারে।
গত মাসে রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানিকে কার্যকরভাবে কালো তালিকাভুক্ত করার পর, তাদের কাছ থেকে কেনাকাটাকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়ার পর এই মন্তব্য করা হয়েছে।
বৈঠকের পর, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক্স-এ লিখেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বুদাপেস্টকে ‘তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণ এবং সীমাহীন ছাড়’ দিয়েছে।
তবে আজ শনিবার হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হাঙ্গেরিকে এক বছরের জন্য রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবহার করা সংক্রান্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অরবানের জন্য একটি বড় জয়, কারণ এর আগে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে।
শুক্রবার অরবানের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প হাঙ্গেরির অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, কারণ হাঙ্গেরি একটি স্থলবেষ্টিত দেশ এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
হাঙ্গেরি এমন একসময় ট্রাম্প প্রশাসনের অব্যাহতি পেল, যখন কিনা ভারত ছাড়াও ওয়াশিংটনের আরও কিছু মিত্রদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তোপের মুখে আছে। ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে অরবানকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং মস্কোর ওপর চাপ বাড়িয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৎপরতার ক্ষেত্রে হাঙ্গেরি প্রায়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অরবান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। অভিবাসন ও সামাজিক ইস্যুতে তিনি ডানপন্থি ট্রাম্পকে অনেকটাই ফলো করেন।
ইউরোপীয় নেতাদের সমালোচনা সত্ত্বেও অরবান রাশিয়ার সাথে তার জ্বালানি সম্পর্ক রক্ষা করে শুক্রবার বলেন, পাইপলাইনগুলো ‘আদর্শিক’ বা ‘রাজনৈতিক’ নয়, বরং বন্দরের অভাবের কারণে এটি একটি ‘ভৌত বাস্তবতা’।
বিবিসি জানিয়েছে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর তার দেশের অত্যধিক নির্ভরতাকে মস্কোর সাথে তার সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায় হিসেবে ব্যবহার করছেন, পাশাপাশি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্যবহার করছেন যার উপর তিনি আগামী এপ্রিলে হাঙ্গেরিতে পুনর্নির্বাচন জয়ের আশা করছেন। তিনি ভোটারদের কাছে ‘সস্তা রাশিয়ান জ্বালানি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্প এবং অরবান শুক্রবার ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা করেন- ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা- যার মধ্যে পুতিনের সাথে আলোচনার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “তিনি (অরবান) পুতিনকে বোঝেন এবং তাকে খুব ভালোভাবে জানেন… আমি মনে করি অরবান মনে করেন যে আমরা খুব অদূর ভবিষ্যতে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যাচ্ছি।”
এদিকে, হাঙ্গেরির নেতা বলেন যে, কেবল তাদের দুটি দেশই সত্যিকার অর্থে ইউক্রেনে শান্তি চায়। তার দাবি, “অন্যান্য সকল সরকার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পছন্দ করে কারণ তাদের অনেকেই মনে করে যে ইউক্রেন সামনের সারিতে জিততে পারে, যা পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি।”
বৈঠকে ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তাহলে আপনি বলবেন যে ইউক্রেন সেই যুদ্ধে জিততে পারবে না?” যার উত্তরে অরবান বলেন, “আপনি জানেন, একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



