বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: জল, স্থল ও আকাশপথে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তার আগেই শুরু করেছে সাইবার হামলা। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকেই বিভিন্ন সোস্যাল সাইটে ভুয়া ছবি, ভিডিও ও তথ্য শেয়ারের হিড়িক পড়ে যায়। অন্যান্য ক্ষেত্রে দেরি করলেও ইউক্রেন ইস্যুতে বেশ আগেভাগেই পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে ফেসবুক ও টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠানকে। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও স্ল্যাশ গিয়ার।
মার্ক জাকারবার্গ নেতৃত্বাধীন মেটা সম্প্রতি জানায়, রাশিয়ার পক্ষে ভুয়া খবর ছড়াতে কাজ করে যাচ্ছে এমন একটি গ্রুপকে খুঁজে পেয়েছে তারা। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৪০টি অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। গ্রুপটিতে চার হাজারের মতো সদস্য রয়েছে। এছাড়া ফেসবুক পেজ ও ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা ৫০০-এরও কম। আগে এ গ্রুপ ও অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল কিনা কিংবা ইউক্রেন আগ্রাসনের সময় এগুলো চালু হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
প্রো-রাশিয়ান এ প্রোপাগান্ডা গোষ্ঠীটি ইউক্রেন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্টের জন্য কাজ করে যাচ্ছিল। সম্প্রতি ঘোস্টরাইটার নামে বেলারুশভিত্তিক হ্যাকিং গোষ্ঠী ইউক্রেনের সেনা কর্মকর্তা ও ইউক্রেনভিত্তিক সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট হ্যাকের চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সৃষ্ট ভুয়া অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে রয়েছেন কিয়েভভিত্তিক বিভিন্ন পেশাজীবী—সংবাদপত্রের সম্পাদক, সাবেক এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে হাইড্রোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ। তারা বেশকিছু ভুয়া সংবাদপত্রের প্রতিবেদন সামনে আনছেন। সেখানে দাবি করা হচ্ছে পশ্চিমারা কিয়েভের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং ইউক্রেন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র।
রাশিয়ার পক্ষে ভুয়া খবর ছড়ানো ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও অ্যাকাউন্টগুলো নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত রাশিয়া টুডে (আরটি) ও স্পুিনক নিউজকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্লক করে দিয়েছে মেটা। এছাড়া রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোর মনিটাইজেশন বন্ধ করে দিয়েছে সোস্যাল জায়ান্টটি।
এদিকে এনবিসি নিউজকে টুইটার জানায়, তারা এক ডজনেরও বেশি অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তারা ইউক্রেন টুডে নামে একটি প্রোপাগান্ডা সাইটের লিংক শেয়ার করে আসছিল। টুইটারের মুখমাত্র টেন্টন কেনেডি সিএনএনকে জানান, রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত সাইটগুলোর পোস্টে এ নোটিস দেয়া হবে, যাতে লেখা থাকবে, ‘এগুলো রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সাইটের সংবাদ’।
কয়েক বছর ধরেই ফেসবুক ও টুইটারের বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল, তারা ভুয়া তথ্য শেয়ারে ভূমিকা রাখে। ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পকে সুবিধা দেয়া, কভিড-১৯ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় ভূমিকা রেখেছে তাদের নিষ্ক্রিয়তা।
গত বছর সিনেট শুনানিতে ফেসবুকের হুইসেলব্লোয়ার ফ্রান্সিস হাউগেন জানান, ২০২০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ভুয়া তথ্যের প্রচার ঠেকাতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে চালু রেখেছিল ফেসবুক। নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল অথবা সেটিংস পাল্টে আগের অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, যা সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হয়েছে।
তারকা, রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে ফেসবুকের কাছ থেকে আলাদা খাতির পেতেন, সে বিষয়টি উঠে এসেছে হাউগেনের ফাঁস করা নথি থেকে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের ওপর প্রযোজ্য নীতিমালা খাটত না ওই ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যক্তিদের বেলায়। ‘ক্রস চেক’ নামের সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যবস্থা ছিল তাদের জন্য, যার অধীনে ক্ষেত্রবিশেষে ‘যা ইচ্ছা তাই’ পোস্ট করার সুযোগ পেতেন ওই হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা।
মেটা নিয়ন্ত্রিত প্লাটফর্ম ও টুইটারে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও জোটের নীতিনির্ধারকদের। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের সময় বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তি প্লাটফর্মগুলোকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।