আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতিহাস গড়ে ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ’র প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে তিনি বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের চার দফা ভোটের মধ্যে তিন দফার ভোট গণনার পরই মুর্মুর জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রতিটি রাউন্ডেই প্রতিপক্ষ যশবন্ত সিনহার থেকে এগিয়ে ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগণনার কাজ। গণনা শেষে রাতে জানা গেল ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতির নাম। ভারতের প্রথম আদিবাসী ও দ্বিতীয় নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হবে ২৫ জুলাই। ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ওই দিনই শপথ নেবেন দ্রৌপদী মুর্মু।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পরই দ্রৌপদী মুর্মু ফুলেল শুভেচ্ছ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃতীয় দফার ভোট গণনার পরই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে যান ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য দ্রৌপদী মুর্মু।
এর আগে দ্বিতীয় দফার ভোট গণনা পর্যন্ত মোট ভোটের ৪৫ শতাংশ পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যশোবন্ত সিনহার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিজেপির একসময়ের শীর্ষ নেতা যশোবন্ত সিনহা পেয়েছেন ২৭ শতাংশ ভোট।
দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৬ ভোট। দ্রৌপদী ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৭টি ভোট। এখনো ভোট গণনা বাকি রয়েছে। ফলে তার ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা আরও বাড়বে।
আদিবাসী আবেগে ভর করেই এবারের রাষ্টপতি নির্বাচনের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রস্তাবিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করেছে বিরোধী দলগুলো।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ে। দেশের ৭৭১ জন সাংসদ এবং ৪ হাজার ২৫ জন বিধায়ক ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশ নেন। এরপর বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে ভোটগণনা শুরু হয়।
বিজেপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মুর্মু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী। এর আগে তিনি ঝাড়খন্ড রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। উড়িষ্যার এই অধিবাসী ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের গভর্নর ছিলেন।
দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডুর কাছে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার অধীনে গ্রামের প্রধান ছিলেন।
রাজ্য রাজনীতিতে আসার আগে মুর্মু একজন স্কুল শিক্ষক হিসাবে শুরু করেছিলেন। তিনি শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, রায়রঙ্গপুর এর একজন সহকারী অধ্যাপক এবং ওড়িশা সরকারের সেচ বিভাগে জুনিয়র সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
গত কয়েক দশক ধরে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ৬৪ বছর বসয়ী মুর্মু ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু সেবার বিহারের রাজ্যপাল ও দলিত নেতা রাম নাথ কোবিন্দকে সরকার রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বেছে নিয়েছিল।
ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর মুর্মু নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন একজন কাউন্সিলর হিসেবে। ওড়িশা থেকে দুইবার বিজেপির হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি এবং নাভিন পাটনায়েক মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন বিজেপির সমর্থনে ওড়িশায় বিজু জনতা দল বা বিজেডি শাসন ক্ষমতায় ছিল। এ ছাড়া তিনি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রায়রাংপুর থেকে ওড়িশা বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।