আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে ড্রোন, গ্রেনেড কিংবা অস্ত্রের মহড়া, তবে এর বাইরেও সাইবার স্পেসে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এই যুদ্ধের ভয়াবহতা। ২০২২ সালে শুরু হওয়া রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে দুই পক্ষই করেছে পাল্টাপাল্টি সাইবার হামলার অভিযোগ। অভিযোগের সত্যতা মিলেছিল উভয় পক্ষ থেকেই। এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনী থেকে পুরস্কার পেয়েছে হ্যাকারদের একটি দল।
ইউক্রেনের এয়ারবর্ন অ্যাসল্ট ফোর্সের কমান্ডার দ্বারা স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ান ফিস্ট’ নামের হ্যাকার দলটিকে। সামরিক বাহিনীর অত্যাবশ্যক কার্যক্রমের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিসরূপ এই সার্টিফিকেট। ‘ওয়ান ফিস্ট’ হ্যাকার দলটি রুশ সামরিক সংস্থার তথ্য চুরি এবং সেনাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির সুবিধার্থে ক্যামেরা হ্যাক করেছিল। পুরো হ্যাকিং প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেছিল ‘ভোল্টেজ’ নামের এক হ্যাকার, যার বসবাস যুক্তরাষ্ট্রে।
মিশিগানের আইটি কর্মী ভোল্টেজের আসল নাম ক্রিস্টোফার কোর্টরাইট। ৫৩ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার বিবিসিকে বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আমার প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে আমি বেশ আনন্দিত।’
ক্রিস্টোফার রাশিয়ার সাইবার নিরাপত্তার দুর্বল দিক খুঁজতে শুরু করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। রাশিয়ার শত শত সিসি ক্যামেরার ম্যাপিং করতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল তাঁর।
তবে গত জানুয়ারিতে রুশ এক অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গিগাবাইট তথ্য চুরি করা ছিল তাঁর মাইলফলক কাজ। পুরো তথ্যের মূল্য কমপক্ষে দেড় বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে বিবিসিকে জানায় ক্রিস্টোফার। ওয়ান ফিস্ট যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ডসহ আটটি ভিন্ন দেশের হ্যাকারদের নিয়ে গঠিত। তারা সম্মিলিতভাবে রাশিয়াতে কয়েক ডজন সাইবার আক্রমণ করে সফল হয় এবং তা সামাজিক মাধ্যমে উদযাপন করে। হ্যাকারদের পুরস্কৃত করার ব্যাপারে জানতে বিবিসির পক্ষ থেকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ইউক্রেনে সাইবার আক্রমণের জন্য ‘কিলনেট’-এর মতো হ্যাকিং গ্রুপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেও রাশিয়া কখনোই তা স্বীকার করেনি।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই ইউক্রেন বিতর্কিতভাবে স্বেচ্ছাসেবক হ্যাকারদের রুশ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করার জন্য উৎসাহিত করে যাচ্ছে। তবে বেসামরিক নাগরিকদের সরকারি পুরস্কার পাঠানোর ঘটনা ইতিহাসে নজিরবিহীন ও বিষয়টি চলমান সংকটকে আরো গভীর করতে পারে। যদিও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে নৈতিক হ্যাকিংয়ের জন্য অফিশিয়াল অ্যাওয়ার্ড সিস্টেম রয়েছে, তবে ইউক্রেনই প্রথমবারের মতো একটি দেশ যারা হ্যাকারদের অপরাধমূলক কাজের জন্য সরকারিভাবে পুরস্কৃত করেছে।
সাইবার যুদ্ধের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো জেনেভা কনভেনশন নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির মতে, কনভেনশনের বিদ্যমান বিধানগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, হাসপাতালকে লক্ষ্য করে চালানো সাইবার আক্রমণ কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।