রঞ্জু খন্দকার ও সোহান আমিন, রাজশাহী : আগে সাগরিকাকে দেখলে অনেকে টিপ্পনী কাটত। কেউ হাসাহাসি করত। অনেকে ভয়ও পেত। দূরে সরে যেত। তবে এখন আর পরিস্থিতি তেমন নেই। বরং সাগরিকাকে দেখলে জমে যাচ্ছে ভিড়, ছোটোখাটো জটলা। সেই জটলার মধ্যমণি সাগরিকাই। সবাই মন দিয়ে শুনছেন তাঁর কথা।
হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্য সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা এবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ জন্য দিনরাত একাকার করে গণসংযোগে মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন তিনি।
সাগরিকা জুমবাংলাকে বলেন, হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে আগে অনেক টিপ্পনী সইতে হয়েছে তাঁকে। এমনকী দুই বছর আগে যখন তিনি রাজনীতি করার কথা বলতেন, অনেকে তাঁর কথা হেসে উড়িয়ে দিতেন। তবে এখন মানুষ তাঁর কথা শুনছেন। তাঁকে সমর্থনও করছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছেন সাগরিকা। গত বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচনে সাগরিকার সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কৌশিক আহমেদ।
তিনি বলেন, এখন দিনরাত গণসংযোগ করছেন তাঁরা। সাতসকাল থেকে গভীর রাত– ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তাঁরা।
সাগরিকার ব্যস্ততার প্রমাণ মিলল গত শুক্রবার। রাত ৮টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন কৌশিক আহমেদ। জানান, সাগরিকা ব্যস্ত আছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোটাপুকুর এলাকায় গণসংযোগ করছেন তাঁরা। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, জটলায় কথা বলছেন সাগরিকা। সেখানে কথা বলতে চাইলে বারো রাস্তা এলাকায় যেতে বলেন সাগরিকা। জানান, সেখানে নেতাকর্মীদের মিটিং আছে। তার ফাঁকে কথা বলবেন।
বারো রাস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আগে থেকেই জড়ো হয়ে আছেন কিছু নেতাকর্মী। সেখানে গণসংযোগের ফাঁকে কথা হয় সাগরিকার সঙ্গে।
সাগরিকা বলেন, মানুষ এখন ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব চায়। হিজড়াদের যোগাযোগ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। নারী কাউন্সিলররা রাত-বিরাতে চলতে পারেন না। পুরুষেরাও নারীদের নিয়ে কাজ করতে পারেন না। কিন্তু হিজড়াদের বেড়ে ওঠাটাই অন্যদের থেকে আলাদা। তাঁরা যেকোনো সময় মানুষের বিপদ-আপদে দাঁড়াতে পারেন। তাই তিনি ভোটের মাঠে অন্যদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে মনে করছেন।
বারো রাস্তা এলাকার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সাগরিকাকে অন্য প্রার্থীদের মতোই সাদরে গ্রহণ করেছেন তাঁরা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে কেউ তাঁকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করছেন না। বরং ভোটের মাঠে তিনি কিছুটা বাড়তি সুবিধাই পেতে পারেন।
সাগরিকার সহযোগী কৌশিক জানান, এখান থেকে রাজ্জাকের মোড়ে যাবেন তাঁরা। সেখান থেকে নিউ কলোনি হয়ে শিরোইল কলোনি ঘুরে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকবেন। এভাবে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করবেন। ছুটির দিন বলে ব্যস্ততা কিছুটা বেশি।
সাগরিকার বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়া এলাকায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে মা-বোনের কাছে থাকেন। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে যান। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সাগরিকা বলেন, আগে হিজড়াদের সঙ্গে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতককে আশীর্বাদ করা ও দোকান থেকে সাহায্য সংগ্রহের কাজ করতেন তিনি। জীবনে সইতে হয়েছে নানা নির্যাতন ও কটু কথা। হিজড়াদের অনেকেই এখন মূলধারার সমাজে মিশে কাজ করতে চায়। নির্বাচিত হলে শুধু নিজ সম্প্রদায় নয়, সব মানুষের জন্যই কাজ করতে চান তিনি। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।