জুমবাংলা ডেস্ক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে এলাকাবাসীর অভিযানের পর সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কেউ যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য পার্কে পাহারা বসিয়েছেন এলাকাবাসী।
এই পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসলেও রবিবার হঠাৎ করেই কেন এলাকার লোকজন অভিযানে গেলেন। আর কেনইবা পার্কে হামলা, অগ্নিসংযোগ আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো। বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এমন অভিযানকে সবাই সাধুবাদ জানালেও নেপথ্যে চাঁদাবাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এবারই প্রথম নয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও চাঁদা না দেওয়ায় একাধিকবার রিসোর্টে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমনটি দাবি করেছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
তরুণ-তরুণীদের আটকের সময় রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর না করে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে। ১৬ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হলেও ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবক না আসায় ৮ জন তরুণ-তরুণীকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মোগলাবাজার থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জনতা কর্তৃক কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু স্থানীয়রা পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেছেন বলে শুনেছি। তবে আমি বারবার তাদেরকে বলেছি আটককৃতদের আমাদের জিম্মায় দিয়ে দেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করবো। কিন্তু তারা তা শুনেননি।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সিলাম ইউপি চেয়ারম্যান তাঁতীলীগ নেতা শাহ ওলিদ ও পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রিসোর্ট ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএনপি দাবিদার একাধিক গ্রুপ রিসোর্টের দিকে দৃষ্টি দেন। এতে মালিকপক্ষ বিপাকে পড়ে যান। কোনো পক্ষকে চাঁদা দিবেন তা ঠিক করতে পারেননি তারা। ফলে কোনো পক্ষেরই মন রাখতে পারেননি তারা।
এদিকে রবিবার বিকালে এলাকার লোকজন রিসোর্টে গিয়ে হামলা চালায়। তারা রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে শুরু থেকেই অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এটি নামে পার্ক হলেও রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্রামের কক্ষ। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকারা এসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিরাপদে অসামাজিক কার্যকলাপ করেন।
এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের এমডি হেলাল আহমদ বলেন, আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়। রোববারও ছেলে এবং মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ভোটার আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাওচুর ও লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে। ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ছিড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। পরে আটককৃতদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। হামলায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুলের নেতৃত্বে এলাকার মুরব্বীগণ মিলে সামাজিকভাবে বিয়ের উদ্যোগ নেওয়ার প্রেক্ষিতে ছেলে-মেয়েদের তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছেলের অভিভাবক জানান, আমাদের কাছে ইজ্জত বড় বিষয়। তাই কোনোকিছু না ভেবে সব শর্ত মেনে সন্তানকে নিয়ে এসেছি। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুল গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় সাধারণ জনতা রিসোর্টটি ঘেরাও করে অনৈতিক অবস্থায় ১৬ জন তরুণ-তরুণীদের আটক করে। তারপর পুলিশের সাথে পরামর্শ করে আমরা ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। আর ৮ জনকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি। এখানে চাঁদাবাজির কোনো ব্যাপার কখনো শুনিনি। এলাকাবাসীর অনুরোধে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আমি এসেছি। তবে ‘সামান্য ভাঙচুর’ হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।