জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় একযুগ পর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর আগে নানা নাটকীয়তায় দফায় দফায় পেছানো হয়েছে এই নির্বাচন। তবে সর্বশেষ নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু এই নির্বাচনে বারবার ভেন্যু পরিবর্তন করায় ভোটারদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সংশয় প্রকাশ করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সদস্য নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। এর মধ্যে আসন্ন নির্বাচনের পরিচালক প্রার্থীও রয়েছেন। তবে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার দে বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের সব রকম প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।
জানা গেছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রিহ্যাবের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের ভেন্যু প্রথমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্ধারণ করা হয়। পরে ভেন্যু গুলশান শুটিং ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশনে (কেআইবি) নির্ধারণ করা হয়। ৪র্থ দফায় ভেন্যু পরিবর্তন করে হোটেল রেডিসন ব্লুতে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফায় এই ভেন্যু পরিবর্তন করে ফের খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে নিয়ে আনা হয়েছে। আর বারবার ভোটের তারিখ ও ভেনু পরিবর্তন করায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় রিহ্যাবের বেশ কয়েকজন সদস্য নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন। প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট এন্ড কনস্ট্রাকশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আল আমিন তার চিঠিতে লিখেছেন, কেআইবি কমপ্লেক্স একটি খুব জনাকীর্ণ এলাকায় অবস্থিত। সেখানে পার্কিং সুবিধা পর্যন্ত নয়। ফার্মগেট অঞ্চলে প্রচণ্ড যানজটের কারণে যে কোনো কার্যদিবসে কেআইবি কময়েক্সের বাইরে কেউ তাদের নিজস্ব গাড়ি পার্ক করবে না।
তিনি চিঠিতে, ভেন্যুটি রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে স্থানান্তর, ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ভায়রা, আটাব, হাব, বিজিএমই-এর মতো স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোটারদের নির্বাচনের পূর্বে ভোটার স্মার্ট কার্ড পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করা সহভোটগ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রায় একই রকমের দাবি তুলে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন, রিহ্যাব সদস্য ও পরিচালক প্রার্থী বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম (দুলাল), আইডিএস অ্যাড্রেস মেকার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জে এম সাজেদুর রহমান, লুমিনাস ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেকচার এসোসিয়েটের ইঞ্জি এন এম নুর কুতুবুল আলম ও ভারটেক্স বিল্ডার্সের ইঞ্জি সৈয়দ মো. জুনাইদ আনোয়ার প্রমুখ।
নির্বাচনের ভেনু পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সুব্রত কুমার দে কালবেলাকে বলেন, ভেন্যু পরিবর্তন নিয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি। বিষয়গুলো আমরা শনাক্ত করেছি। আর এই ভেন্যুতে (কেআইবিতে) গতকালও আমি গিয়েছি। নির্বাচনের জন্য এই ভেন্যু খুবই ভালো। কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশনের অবস্থান। আর গাড়ি রাখারও ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে আমরা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছি। কেউ যদি বাইরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে দেখা যাবে। আর উপরে কী হচ্ছে তা, নিচ থেকে বড় স্কিনের মাধ্যমে দেখা যাবে। আর ভোটের দিন পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া র্যাবকেও ইনফরম করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর আগে ভোটগ্রহণের জন্য কেআইবি মিলনায়তন ঠিক করা হলেও এই ভেন্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দুই প্যানেলের নেতারা। তারা স্থান পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন জানান।
আবেদনে বলা হয়, এই ভেন্যুতে সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব না। এ ছাড়া কার্যদিবসে এই এলাকায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। জ্যামের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। তারা পাঁচ তারকা হোটেলকে ভেন্যু করার অনুরোধ জানান। আবেদন অনুযায়ী নির্বাচনে চতুর্থ দফায় ভেন্যু পরিবর্তন করে হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন করা হয়। সে অনুযায়ী হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। হঠাৎ করে গত বৃহস্পতিবার অদৃশ্য কারণে আবারও ভেন্যু পরিবর্তন করে কেআইবিতে নেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার হবে কি না এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই নির্বাচনের কমিশন গঠন এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনটির সব ব্যাংক হিসাব। একই সঙ্গে নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তপশিল ঘোষণা হয়। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)-এর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রিহ্যাব নির্বাচনে এবার চারটি প্যানেল ভোটের লড়াইয়ে প্রতিবন্ধিতা করছে। নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর ৩টি প্যানেল মাঠে সক্রিয় থাকলেও প্রভাবশালীদের দেন দরবারে হঠাৎ করেই আরেকটি প্যানেল ভোটের লড়াইয়ে আবির্ভূত হয়েছে। আর এতে করে প্রার্থীদের একটি অংশ অন্য দুটি প্যানেল থেকে এসে নতুন এই প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। সংগঠনটির সাধারণ ভোটাররা বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না বলে জানা গেছে। ভোটারদের মাঝে এটি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংগঠনটিতে ২৯ পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৯৩ ব্যবসায়ী আর ভোট দিবেন ৪৭৬ জন সদস্য। এরমধ্যে ঢাকার ২৯ পরিচালক পদের বিপরীতে চারটি প্যানেল থেকে ৮৬ প্রার্থী আছেন। আর চট্টগ্রামের ৩টি পরিচালক পদের বিপরীতে আছেন সাতজন প্রার্থী। সব প্রার্থী এখন ভোটের জন্য গণসংযোগে রয়েছেন।
প্যানেল ৪টি হচ্ছে- সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ, সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান এমজিআর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ডেভেলপারস ফোরাম, রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নবজাগরণ প্যানেল এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্বে জয় ধারা নামে একটি প্যানেল হয়েছে। ইন্তেখাবুল হামিদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই।
ভাষাকে শক্তিশালী করতে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।