রেফ্রিজারেটরে খাবার নিরাপদ রাখা, খাদ্যজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ ও খাবার টাটকা, সুস্বাদু থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার রেফ্রিজারেটরে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য এখানে প্রয়োজনীয় কিছু উপায় তুলে ধরা হলঃ
১. সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা (নরমাল পার্ট)
তাপমাত্রা: রেফ্রিজারেটরে খাবার রাখার পূর্বে নিশ্চিত করুন যে আপনার রেফ্রিজারেটর 37-40°F (3-4°C) তাপমাত্রা সেট করা আছে। এই তাপমাত্রা আপনার খাবারকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা না করেও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে ধীর করে দেয়। এই ক্ষেত্রে ফ্রিজের থার্মোমিটার সঠিকভাবে এই তাপমাত্রা নিরীক্ষণ এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. রেফ্রিজারেটর সঠিকভাবে খাবার গুছিয়ে রাখা
নরমাল পার্ট(Non Freezer):
প্রথম ও মাঝের তাক : রেডি-টু-ইট খাবার যেমন শুকনো খাবার, পানীয় এবং রেডিমেড স্ন্যাকস সংরক্ষণ করুন। এই আইটেমগুলি কম রান্না বা পুনরায় গরম করার প্রয়োজন হয় তাই সহজে অ্যাক্সেসের জন্য প্রথম ও মাঝের স্তর বা তাকে রাখা উচিত।
ড্রয়ার: ফল এবং সবজির জন্য ড্রয়ার ব্যবহার করুন। বেশিরভাগ রেফ্রিজারেটরে ফল এবং সবজির জন্য আলাদা ড্রয়ার থাকে, প্রতিটি ড্রয়ারে সঠিক আর্দ্রতার মাত্রা বজায় থাকে।
Door তাক: এই তাকে মশলা, জুস এবং অন্যান্য আইটেম সংরক্ষণ করুন যা কম পচনশীল। এই তাক টি ফ্রিজের উষ্ণতম অংশ, তাই এখানে দুধ বা ডিম রাখা এড়িয়ে চলুন।
ডিপ পার্ট (Freezer):
প্রথম তাক বা ড্রয়ার : দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির এবং দই রাখুন। এই আইটেমগুলির গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ফ্রিজের উপযুক্ত ঠান্ডা অংশে সংরক্ষণ করা উচিত।
মাঝের ও শেষের তাক বা ড্রয়ারঃ এখানে কাঁচা মাছ- মাংস, হাঁস-মুরগি এবং সামুদ্রিক খাবার রাখুন। কারন এই দুটি ড্রয়ার বা তাক সবচেয়ে ঠান্ডা এবং এই কাঁচা আইটেমগুলির ঘ্রাণ অন্যান্য খাবারে ছড়ানো থেকে বাধা দেয়, সেইসাথে ক্রস-দূষণের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৩. সঠিক স্টোরেজ কন্টেইনার ব্যবহারঃ
এয়ারটাইট কন্টেইনার: এগুলি শুকনো খাবার এবং প্রস্তুতকৃত খাবারের জন্য ব্যবহার করুন। কারন এগুলো আর্দ্রতা হ্রাস প্রতিরোধ করে এবং গন্ধ শোষণ থেকে খাদ্য রক্ষা করে।
প্লাস্টিকের মোড়ানো এবং ফয়েল: মাংস বা চিজ টাইপের খাবার তাজা রাখতে এবং গন্ধ ছড়াতে বাধা দেওয়ার জন্য শক্তভাবে মোড়ানো উচিত।
পরিষ্কার পাত্র: এগুলি আপনাকে ভিতরে কী আছে তা দেখতে সাহায্য করে, ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং খাবার নষ্ট হতে দেয়া থেকে রক্ষা করে।
৪. আপনার ফ্রিজ পরিষ্কার রাখুন
নিয়মিত পরিষ্কার করা: ছাঁচ এবং ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করতে অবিলম্বে Spills পরিষ্কার করুন। উষ্ণ পানি এবং হালকা ডিটারজেন্টের দ্রবণ দিয়ে নিয়মিতভাবে তাক এবং ড্রয়ারগুলি মুছুন।
ফ্রিজের পরিচ্ছন্নতা: সমস্ত খাবার এবং তাক সরিয়ে প্রতি কয়েক মাসে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বেকিং সোডা এবং জলের মিশ্রণ ব্যবহার করুন যাতে যেকোনো জেদী দাগ এবং গন্ধ সহজে দূর হয়।
৫. খাবারে লেবেল এবং তারিখ ব্যবহারঃ
লেবেলিং: শুকনো খাবার এবং প্রস্তুতকৃত খাবারের জন্য স্টোরেজ তারিখ চিহ্নিত করতে লেবেল ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে খাবারের সতেজতার ট্র্যাক রাখতে এবং কখন আইটেমগুলি খাওয়ার অযোগ্য হবে তা জানতে সহায়তা করে৷
ফার্স্ট ইন, ফার্স্ট আউট (FIFO): নতুনের আগে পুরানো আইটেম ব্যবহার করতে এই নিয়মটি অনুসরণ করুন। নতুন পণ্যগুলিকে পুরানোগুলির পিছনে রাখুন যাতে ভুলে না যান এবং পণ্য গুলো নষ্ট না হয়।
৬. ফ্রিজে ওভারলোড না করাঃ
বায়ু সঞ্চালন: খাদ্য সামগ্রীর চারপাশে বায়ু চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। ফ্রিজ ওভারলোডিং ভেন্ট ব্লক করতে পারে এবং একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ তাপমাত্রা বজায় রাখাকে কঠিন করে তোলে।
খাবার লোড: ফ্রিজে খাবার বা আইটেম গুলো এমনভাবে সাজান যাতে প্রতিটি খাবার বা আইটেমের মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। সঠিক উপায়ে খাবার লোড করতে স্ট্যাকযোগ্য পাত্র এবং তাক ব্যবহার করুন।
৭. মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখগুলি পর্যবেক্ষণ করুন
নিয়মিত মনিটরিং : সময়মত পণ্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে পচনশীল আইটেম যেমন দুগ্ধ এবং মাংস। খাদ্যজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি এড়াতে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এমন কোনো আইটেম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
তারিখ অনুসারে ব্যবহার: “উৎপাদন” এবং ” মেয়াদ উত্তীর্ণ ” তারিখগুলিতে মনোযোগ দিন। “উৎপাদন” তারিখ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারন খাবার যখন “মেয়াদ উত্তীর্ণ” হয়ে যায় তখন এর গুণমান নষ্ট হয়ে যায় যা খাওয়ার অনুপযোগী।
আপনার রেফ্রিজারেটরে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা শুধু ঠান্ডা রাখার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । খাবারের সতেজতা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় সঠিক বাবস্থাপনা , ফ্রিজে কোন সমস্যা মনে হলে সময় মত সার্ভিস করানো, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং খাবার স্টোরেজে সঠিক উপায় অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খাবার সংরক্ষণের উপায় গুলো অনুসরণ করে, আপনি অপচয় কমাতে পারেন, অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনার স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন। “সতেজ খাবার গ্রহন করুন , স্বাস্থ্য ভালো রাখুন” । শুভ হোক আপনার রেফ্রিজারেটর ব্যবহার ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।