জুমবাংলা ডেস্ক: প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমলেও রপ্তানি আয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে শেষ হলো ২০২১-২২ অর্থবছর। নিউজবাংলা ২৪ এর প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
সদ্য সমাপ্ত এই অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ (৫২.০৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।
একই সঙ্গে একক মাসের হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই মাসে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার (৪. ৯১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ।
এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। গত বছরের জুন মাসে ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হয়েছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও জুন মাসে রপ্তানিতে এই উল্লম্ফন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকদের অবাক করে দিয়েছে। এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তারা।
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার (৫২.০৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে রপ্তানি খাতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। লক্ষ্যের চেয়ে এত বেশি আয়ও কখনও দেশে আসেনি।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প-মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মে মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমায় দেশের অর্থনীতিবিদ-রপ্তানিকারকদের মধ্যে অনেকেই হতাশ হয়েছিলেন। তারা বলতে শুরু করেছিলেন, এই তো রপ্তানি কমা শুরু হলো। কিন্তু আমি ওই সময় বলেছিলাম ভিন্ন কথা। আমি বলেছিলাম মে মাসে রোজার ঈদের কারণে ৮/১০ দিন সব পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল; চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। সেই কয়দিন আসলে কোনো রপ্তানি হয়নি। সে কারণেই মে মাসে রপ্তানি কম হয়েছিল। জুন মাসে ঠিকই আবার বেড়েছে। শুধু বাড়েনি। এক মাসের হিসাবে রেকর্ড হয়েছে।’
‘যুদ্ধের মধ্যেও এই উল্লম্ফন আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আশা করছি এই ইতিবাচক ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় কম দামি পোশাক তাদের কিনতেই হবে। আমরা প্রচুর কম দামি পোশাক রপ্তানি করি। সে কারণে আমার মনে হয় না যে যুদ্ধের কারণে আমাদের রপ্তানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে।’
‘চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকান ক্রেতারা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। ভিয়েতনাম থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। তাই আগামী দিনগুলোতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে।’
গত মে মাসে পণ্য রপ্তানি করে ৩৮৩ কোটি (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। যা ছিল আগের ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছিল ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। আগের মাসগুলোতে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়বে। তবে আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রপ্তানি খুব একটা কমবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দেশটির অর্থনীতিতে কোনো সংকট নেই। সে কারণে ওই দেশের লোকজন পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে এমনটা আমার কাছে মনে হয় না।
‘তবে যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। সেখানে আমাদের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
৮২ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই বছরে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৯ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ।
অন্যান্য খাত
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, শুধুমাত্র পাট ছাড়া অন্য সব খাতেই বিদায়ী অর্থবছরে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই বছরে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে প্রায় ১৯ কোটি ডলার।
এছাড়া স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, বাইসাইকেল ১৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ১৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি থেকে ৪ কোটি ২৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।
রেমিট্যান্স কমেছে ১৫.১২ শতাংশ
একই দিনে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
ইট-পাথরের দিন শেষ, এবার মাটি-বালিতে এক্রিলিক পলিমার দিয়েই হবে রাস্তা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।