রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: শান্ত সকালে পিচঢালা পথে ‘জগিং’য়ে বেড়িয়েছেন আপনি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ হ্রদ। সেখানে হয়ত কোনো পানকৌড়ি কিংবা অন্য কোনো জলচর ডুবে ডুবে পাল্লা দিচ্ছে আপনার সঙ্গে। হ্রদের জল ছুঁয়ে আসা হালকা হাওয়া পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে আপনার গায়েও। কেমন লাগবে?
কিংবা বিরান বিকেলে রেলরাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন আনমনে। পথের ধারে বুনো লতাগুল্মের ঝোঁপ। সেখানে ফুটে আছে হলুদ-বেগুনী– নানারঙা জংলি ফুল। পাশে সেই স্বচ্ছ হ্রদটিও সঙ্গ দিচ্ছে আপনাকে। অবাক হচ্ছেন?
এমন অবাক করা অনুভূতির নিত্য স্পর্শ নিতে পারেন গাইবান্ধা জেলা শহরের বাসিন্দারা। এখানকার পৌর গোরস্থান থেকে কেন্দ্রীয় ইদগা হয়ে স্টেডিয়াম সড়কে গেলেই অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে উঠবে যে কারও মন।
এই সড়কের একপাশে রয়েছে রেলওয়ের কৃত্রিম হ্রদ। তার পাশে সমান্তরালে বয়ে চলেছে রেললাইন। এটি স্টেডিয়াম রোড বা পুরাতন বাদিয়াখালি সড়ক নামেও পরিচিত।
স্টেডিয়াম সড়কের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে গাইবান্ধা শহরের সবচেয়ে সুন্দর সড়ক সম্ভবত এটি। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই লেকের ধারে জমি কিনে বাড়ি করেছেন তিনি।
শুধু জগিংয়ে বের হওয়া ‘ভোরের পাখি’রা বা বিকেলের সৌন্দর্য খোঁজা প্রকৃতিপ্রেমিকেরা নন, এই সড়কে দুপুর-সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে এসে আড্ডা জমান গাইবান্ধা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শহুরে তরুণ-তরুণী, নারী-শিশু-পুরুষেরা।
এই সড়কের পাশে চায়ের দোকান দিয়েছেন সাবিত্রী সাহা। তিনি বলেন, তিনি মাসখানেক ধরে দোকান করছেন। তাঁর মূল কাস্টমার এই সড়কে ঘুরতে আসা লোকজন। কলেজের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে নানা শ্রেণির মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে হাসের দল। সড়কের দুপাশে দর্শনার্থীদের পদচারণা। কেউ রাস্তা ধরে হাঁটছেন। কেউ রেললাইনে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউবা ছবির জন্য নানা পোজ দিচ্ছেন।
রেললাইনে ছবি তোলার জন্য সেজেগুজে পোজ দিচ্ছিলেন এক তরুণী। নাম বললেন, শ্রাবণী দত্ত।
শ্রাবণী জানান, তাঁরা ঢাকায় থাকেন। ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। বাড়ি আসলেই এই সড়কে আসেন। এখানে আসলে যে কারও মন ভালো হবেই।
রেললাইনের পাশেই কয়েক বছর ধরে দোকান করেন রওশন আরা। তাঁর দোকানে বেশ ভিড়।
রওশন আরা বলেন, এখান থেকে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ খুব বেশি দূরে নয়। আশপাশে কিছু ছাত্রাবাস আর ছাত্রীনিবাস আছে। এসব ছাত্রাবাসের ছেলেমেয়েরা তার দোকানে আসেন। চা পান করতে করতে আড্ডা জমান তাঁরা। শহরের অন্য এলাকার বাসিন্দারাও ঘুরতে আসেন। বেশি লোকের ভিড় হয় বিকেল-সন্ধ্যার দিকে।
স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে লেকটি ইজারা দিয়েছে। সেখানে ইজারাদার মাছ চাষ করেন। পানি শুকিয়ে গেলে কিছু অংশে ধানচাষও করা হয়। ইদানিং দর্শনার্থীদের লক্ষ্য করে এখানে লেকের ওপর মাচা করে কিছু দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। এতে লেকটি একসময় দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, রেলওয়ের উচিত লেকটার প্রতি খেয়াল রাখা। এত সুন্দর লেক দেশের কোনো শহরে আছে কি না, সন্দেহ। এই লেকটি যাতে দখলে-দূষণে হারিয়ে না যায়, সে জন্য কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য লেকটির চারপাশসহ রেলপথটি যেন আরও নিরাপদ করা যায়, প্রশাসনের সে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লেকের ধারে ঘুরতে আসা শামীম হাসান বলেন, তিনি গাইবান্ধা সরকারি কলেজে পড়েন। শহরেই থাকেন। তাঁরা চান, স্টেডিয়াম সড়কটিসহ, রেলপথ ও লেকটি গাইবান্ধা শহরের আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠুক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।