গত শতকের পঞ্চাশের দশকে রোবট আবিষ্কৃত হয়ে এর ব্যবহার শুরু। তাই স্বংয়ক্রিয়ভাবে কাজ করার এই যন্ত্র মানুষের কাছে বহুল পরিচিত। তবে কোবট শব্দটি এখনো খুব পরিচিত নয়। কোলাবোরেটিভ রোবটের সংক্ষিপ্ত শব্দরূপ—কোবট। বাংলায় বলা চলে ‘সহযোগিতাপূর্ণ রোবট’। এটি একটি উন্নত রোবট প্রযুক্তি, যা মানুষের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম।
সাধারণত এমনভাবে কোবটের নকশা করা হয়, যাতে মানুষ ও রোবট পাশাপাশি একসঙ্গে নিরাপদভাবে কাজ করতে পারে, যেখানে রোবট মানবশ্রমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে কোনোভাবেই তার কাজের পরিসর বা স্বাধীনতা থেকে মানুষের কাজ বিপন্ন হয় না। কোবটের ধারণাটি আধুনিক শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং এটি মানব-রোবট সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিজ্ঞানী ডেভিড হাজিনস ও তাঁর সহযোগীরা ১৯৯০-এর দশকে কোবট বা সহযোগিতাপূর্ণ রোবটের ধারণা প্রথম তুলে ধরেছিলেন। তবে কোবটের প্রথম নকশাটি তৈরি হয় ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অরিগনে। এখানে গবেষকেরা মানুষের সঙ্গে রোবটের নিরাপদ যোগাযোগের উপায় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। আর এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ২০০৮ সালে, যখন ইউনিভার্সাল রোবট নামে ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বাজারে প্রথম কোবট নিয়ে আসে।
কোবটের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সাহায্য করা। তাই এর নকশা এমনভাবে করা হয়, যাতে এটি সহজেই মানুষকে সহায়তা করতে পারে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। বেশির ভাগ কোবটেই রয়েছে উন্নত সেন্সর, ক্যামেরা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা, যেগুলো রোবট ও মানুষের মধ্যে সঠিক যোগাযোগ নিশ্চিত করে। কোবটে সাধারণ রোবটের তুলনায় অনেক বেশি মসৃণ ভাব ও নিরাপত্তা থাকে, যাতে মানুষের শারীরিক কোনো ক্ষতি না হয়।
বাজারে বেশ কিছু কোবটের অস্তিত্ব থাকলেও আলট্রালাইটওয়েট কোবট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোবট এবং মোবাইল কোবটের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেশি। নামেই প্রকাশ পায় যে আলট্রালাইটওয়েট কোবট খুবই হালকা ও ছোট আকারের, যেগুলো ছোট ছোট কাজের জন্য উপযোগী। এগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য তৈরি করা হয়, যেমন কোনো যন্ত্রে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ সংযোজন বা প্যাকেজিং করা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোবট বড় আকার এবং জটিল শিল্পকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন পণ্য উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলো জোড়া লাগানো বা সরিয়ে ফেলার কাজ। আর মোবাইল কোবটের স্থানান্তরিত হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এবং সে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ও সংগ্রহের কাজ সম্পাদন করতে পারে।
কোবটের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এসবের মধ্যে মানবিক নিরাপত্তাসংবলিত কোবট এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা সাধারণত নিরাপদ এবং মানুষের সঙ্গে কাজ করার সময় শারীরিক আঘাত বা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সহায়ক। তা ছাড়া কোবট দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও বেশি কার্যকর হতে পারে। কারণ, এটি কাজের পরিমাণ বাড়ায় এবং একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে সক্ষম।
কোবট একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে, শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দিতে পারে। তাই এর ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। ফলে মূলত কারখানার উৎপাদনক্ষমতা ও আয়—দুটিই বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া কোবটের নকশা এমনভাবে করা হয় যে মানুষের জন্য ক্লান্তিকর হতে পারে, এমন সব কাজ এটি দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সক্ষম। বারবার একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
কোবট প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন কোবটের প্রোগ্রামিং ও রক্ষণাবেক্ষণ সাধারণত বেশ জটিল এবং এতে উচ্চতর দক্ষতা প্রয়োজন হয়। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানব-রোবট সম্পর্ক, অর্থাৎ কোবটের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং এটি নিশ্চিত করা যে কোবট কাজ করার সময় মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখবে। যদিও কোবট কাজের দক্ষতা বাড়ায়, তবে তার প্রাথমিক খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এখনো অনেক ব্যবসার জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কিছু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কোবট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে কোবট আরও স্মার্ট, নিরাপদ ও সহজলভ্য হয়ে উঠবে। এতে মানব-রোবট সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে এবং তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণশিল্প ও পরিবহন খাতে কোবটের ব্যবহার বাড়বে। তাই সব মিলিয়ে কোবট বা কলাবোরেটিভ রোবট মানবসমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এগুলো শিল্প, উৎপাদন ও সেবা খাতে কাজের ক্ষেত্রকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে। কোবটের মাধ্যমে মানুষ ও যন্ত্র একে অপরের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারবে। ফলে উন্নত ও দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে কাজের দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।