আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৃটেনে আশ্রয়প্রার্থী যাদেরকে রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দিতে চাইছে সরকার, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত। এক পঞ্চমাংশের আছে সন্তান। নতুন এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। কমপক্ষে ৫০০ বিভিন্ন ব্যক্তি, স্থানীয় যেসব সংগঠন শরণার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে তারা সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছেন প্রচারণা বিষয়ক কোয়ালিয়শন ‘টুগেদার উইথ রিফিউজিস’। বুধবার এই কোয়ালিশন এই জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে দাতব্য সংস্থা কেয়ার ফোর ক্যালে। এতে দেখা গেছে বৃটেনে শরণার্থী মর্যাদা দেয়ার স্বীকৃতি আছে এমন সব দেশের আশ্রয়প্রার্থী শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ। অথচ তাদেরকে রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। রোয়ান্ডায় এলজিবিটিকিউপন্থিরা নির্যাতনের শিকার। ফলে তারা এ কারণে বৃটেনে আশ্রয় পেতে পারে।
তা সত্ত্বেও যেসব শরণার্থীকে রোয়ান্ডায় পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে পরিসংখ্যান করতে গিয়ে তাদের তিনটি স্যাম্পল শনাক্ত হয়েছে এলজিবিটিকিউ হিসেবে।
আশ্রয়প্রার্থীদের রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বৃটেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। তিনি মনে করেছিলেন, ছোট্ট ছোট্ট বোটে করে লোকজনের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বৃটেনে যাওয়া এতে বন্ধ হবে বা কমে যাবে। তিনি বলেছিলেন, প্রকৃত কোনো আশ্রয়প্রার্থী নেই। স্যাম্পল হিসেবে গবেষণা বা জরিপে একটি নমুনায় ২১৩ জন আশ্রয়প্রার্থীকে নেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদেরকে রোয়ান্ডা পাঠিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, এর মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ বৃটেনে গিয়েছেন আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, ইরান, সুদান এবং সিরিয়ার মতো দেশ থেকে। এসব দেশের আবেদনকারীদের মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৮২ ভাগের সফলতা আছে।
যেসব মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে তারা সবাই ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এ বছর ১৭ই জানুয়ারির মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নোটিশ পেয়েছেন। যারা এমন নোটিশ পেয়েছেন রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেয়ার মতো ঝুঁকির মধ্যে আছেন তারা। বৃটেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছিলেন, শুধু গত ১২ মাসে বৃটেনে যেসব মানুষ ছোট্ট ছোট্ট বোটে করে বেআইনিভাবে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে তার মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই পুরুষ। তারা কার্যত ইকোনমিক মাইগ্রেন্ট (অর্থাৎ তারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য এসেছে)। তারা প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থী নয়।
নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এর মধ্যে ১৩ জন নারী আছেন। মোট স্যাম্পল বা নমুনার প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ৪২ ভাগ এরই মধ্যে বিয়ে করেছেন অথবা এনগেজমেন্ট সেরে ফেলেছেন। অন্যদিকে শতকরা ২০ ভাগের আছে সন্তান। আধুনিক দাসত্ব ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্ট করেছেন দুই-তৃতীয়াংশ।
এসব আশ্রয়প্রার্থীকে যখন রোয়ান্ডা পাঠিয়ে দেয়ার স্কিম ঘোষণা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন বলা হয়েছিল, এর টার্গেট হবে শুধু সিঙ্গেল পুরুষ বা অবিবাহিত পুরুষ। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে দেখা মেলে ইরিত্রিয়া থেকে পাচার হওয়া এক ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা। এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গার্ডিয়ান অবহিত করলে তার নোটিশ বাতিল করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইউগভ একটি জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, যেসব মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন তার মধ্যে শতকরা মাত্র ১০ ভাগ মানুষ মনে করেন ছোট্ট ছোট্ট বোটে করে শরণার্থী বৃটেনে আসা বন্ধ করতে সবচেয়ে ভাল উপায় হলো এসব অভিবাসীকে রোয়ান্ডা পাঠিয়ে দেয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।