জুমবাংলা ডেস্ক : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করে মিয়ানমার সরকারকে প্রতিশ্রুতি পূরণে মনোযোগী হতে কড়া বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিয়ত অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বুধবার বিবৃতি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, দেশটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কেন স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী হচ্ছে না, তার সঠিক কারণগুলো সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশটিকে মিথ্যাচার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৩ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উত্থাপন করেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়াও তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিবৃতি দেয়।
সাম্প্রতিক ন্যাম সম্মেলনে উ কিয়াও তিন অভিযোগ করেন, ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’, ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ ও ‘গণহত্যার’ মতো শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে বাংলাদেশ ‘ভিন্নভাবে’ চিত্রায়িত করছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করার কারণ হিসেবে মিয়ানমার ওই জনগোষ্ঠীকে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যায়িত করে থাকে। দেশটি বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে গিয়েছিল।
মিয়ানমারের এ ধরনের দাবিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলছে বাংলাদেশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ, তথ্যবিকৃতি এবং ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা ওই বক্তব্যকে বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করছে। বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে, যাদের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নতুন করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। সংকট প্রলম্বিত হওয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে যারা দায়ী, তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অযৌক্তিক অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের ভিটেমাটিতে ফেরানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা থেকেই মিয়ানমার অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরা এবং সেখানে আবার থিতু হওয়ার জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার বিষয়টি মিয়ানমারকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে বলেছে বাংলাদেশ। বহু বছর ধরে চলে আসা এ সংকটের সমাধান যাতে টেকসই হয়, সেজন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে হবে মিয়ানমারকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে আরসা বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। রাখাইনে কয়েকজন রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়া সম্পর্কে মিয়ানমার যে দাবি করেছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয়রত ১০ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



