জুমবাংলা ডেস্ক : জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাজনৈতিক দল ও সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে সাকি উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জাতিসংঘ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে চাই। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাতিসংঘ এতে সহযোগিতা করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সংস্কার সকলের দাবি। দেশকে নতুন বন্দোবস্তের দিকে নিতে হবে। সংবিধানসহ সকল সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। একমত হওয়া বিষয়গুলো জাতীয় চার্টার হিসেবে প্রকাশ করতে হবে এবং তা জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হতে হবে। তিনি দাবি করেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে হওয়া উচিত, যেখানে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে টেকসই সংবিধান সংস্কার করা হবে। সেটা কতদিনে বাস্তবায়ন হবে সেটার জন্য জাতীয় ঐকমত্য হওয়া দরকার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের কাছে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হলে ‘জুলাই সনদ’ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ গণতন্ত্রের একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সকল রাজনৈতিক দলের উচিত এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। তিনি জানান, এনসিপি মনে করে, সংবিধান সংস্কার গণপরিষদের মাধ্যমেই করতে হবে, অন্যথায় তা টেকসই হবে না। তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন আইনপরিষদ ও গণপরিষদ নির্বাচনের সমন্বয়ে হওয়া উচিত।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বিচার ও সংস্কার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। জাতিসংঘ মহাসচিবও আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সরকার নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাবে এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত চেতনা বজায় রেখে কাজ করবে।
বৈঠক শেষে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি জানান, তাঁরা জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছেন যাতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় থাকা স্বৈরাচারী সরকারের আত্মীয়দের নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করা হয়।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতিসংঘের তিনটা প্রতিষ্ঠানে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তিনজন আত্মীয় কাজ করছে, আমি জাতিসংঘের মহাসচিব কে বলেছি, জাতিসংঘ যেহেতু ইনসাফ চায়, ইনসাফটা যেন শুরু হয় জাতিসংঘের নিজের অফিস থেকে। আমরা বলেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে কাজ করছে, ইউএনডিপি তে শেখ রেহানার ছেলে ববি কাজ করছে, এবং ববির স্ত্রী কাজ করছে মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনে। আমরা বলেছি এই নিয়োগগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া, বাংলাদেশে একটি অস্থায়ী মানবাধিকার অফিস স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে গণহত্যার বিচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।’
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আশ্বাস দিয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।