জুমবাংলা ডেস্ক: ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ ও তার স্ত্রী। তবে তার স্ত্রীর পা ভেঙে গেছে। জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের বরগুনা প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম রতন-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বর্তমানে তারা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইউএনও দম্পতি লঞ্চের ভিআইপি কেবিন নীলগিরির যাত্রী ছিলেন।
ইউএনও জানান, ঢাকা থেকে অফিসিয়াল কাজ সেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাত ৩টার দিকে লঞ্চের অন্য যাত্রীদের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। এ সময় লঞ্চটি সুগন্ধা নদীর মাঝখানে অবস্থান করছিল। অনেকেই নদীতে লাফিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন লঞ্চ থেকে তারাও লাফ দিলে তৃতীয় তলা থেকে দোতলায় পড়ে যান। তখন তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারার ডান পা ভেঙে যায় এবং হাতেও প্রচণ্ড আঘাত পান।
তিনি আরও জানান, লঞ্চে থাকা বৃদ্ধ এবং শিশুরাই বেশি হতাহত হয়েছেন। এছাড়া লঞ্চে অনেক নারী ছিলেন, যারা নদীতে লাফিয়ে পড়েছেন।
এদিকে নিখোঁজ যাত্রীদের তথ্য দিতে পারছে না বরগুনা নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ। রাজধানী ঢাকা থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলের কাছে সুগন্ধা নদীর মাঝখানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লঞ্চটি।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। কতজন নিখোঁজ আছেন, সেই তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের। তাই তাদের খোঁজে বরগুনা নৌবন্দরে এসেছেন লঞ্চে থাকা যাত্রীদের স্বজনরা। কিন্তু এখানে এসে কোনো তথ্যই মিলছে না। নিখোঁজ যাত্রীদের তথ্য দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বরগুনা নৌবন্দরে।
বরগুনা নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ জানান, লঞ্চটিতে ৪-৫শ যাত্রী আরহণ করতে পারে। তাদের উদ্ধারে বরিশাল নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাথে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঝালকাঠি ইউনিটের যুব সদস্যরা উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছে কোস্টগার্ডসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
বেঁচে ফিরে আসা দৈনিক জনবাণী পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি সাংবাদিক সানাউল্লাহ জানান, লঞ্চটি ঝালকাঠি টার্মিনালের কাছাকাছি পৌঁছলে ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন মুহূর্তেই পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠেছেন বলে জানান।
সাংবাদিক সানাউল্লাহর পাশাপাশি এমভি অভিযান-১০ এর দুর্ঘটনার কবল থেকে বরগুনায় ফিরে এসেছেন শহরের ক্রোক এলাকার বাসিন্দা বাবা রাজু আহমেদ, ছেলে হৃদয় (১২), মিম (৫), স্ত্রী মমতাজ, শহরের কাঠপট্টি এলাকার ছেলে মীর ফাইয়াজ, বন্ধু আশিক আহমেদ, রাইসুল আকরামসহ অনেকে।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া সিকদার বাড়ির রিনা বেগম (৩৮) ও তার মেয়ে লিমা (১৪) নিখোঁজ রয়েছেন। তবে লিমা বেগমের ছেলে কাউনিয়া এমদাদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রনি (১৫) লঞ্চ থেকে লাভ দিয়ে পড়ে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। বর্তমানে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এছাড়াও বরগুনার অধিকাংশ যাত্রীই বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুরি, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী, বামনা উপজেলার রামনা, পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়াসহ বিভিন্ন এলাকার। এখনো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
বর্তমানে ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালমান রয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় রয়েছেন- ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, ঝালকাঠি যুব সদস্য, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা।
দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইউএনও, সমাধান করেন ৩টি গুরুত্বপূর্ন সমস্যা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।