যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের উত্তর-পশ্চিমের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ আগুন। জ্বলছে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী শহর সান্তা মনিকা ও মালিবুর মতো সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা। এ ছাড়াও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে প্যাসাডেনার আশপাশের উপশহর এবং সান ফার্নান্দো উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এত ধ্বংসাত্মক দাবানল আগে দেখা যায়নি। বলা হচ্ছে, কোনো অগ্নিনির্বাপন কার্যক্রম দিয়ে এই দাবানল ঠেকানো সম্ভব নয়। আগ্নিনির্বাপনের গাড়িগুলোর পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আবার পানি ভরে প্রস্তুত হতে দেখা দিচ্ছে পানির সংকট।
এই দাবানলে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে সংলগ্ন ‘প্যালিসেডস ফায়ার’ দাবানলটি আকারে সবচেয়ে বড় (বলে রাখি, মূলত স্থানগুলোর নামানুসারেই চিহ্নিত করা হচ্ছে দাবানলগুলোকে)। ২১ হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে এতে। গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল নাগাদ এর মাত্র ৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
দাবানলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আগুন জ্বলছে ইটন শহরে। প্যাসাডেনার উত্তরে সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালায় ছড়িয়ে পড়েছে এটি, পুড়িয়ে দিয়েছে ১৪ হাজার একরের বেশি এলাকা। ধ্বংস করে দিয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি। বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘আগুন লাগার গতি কিছুটা ধীর হয়ে এসেছে।’ তবু এর পরদিন, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এর মাত্র ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। সেদিন সকালে তুলনামূলক কিছু ছোট দাবানল, যেমন কেনেথ ফায়ারের অগ্রগতি বন্ধ করা গেছে। এই আগুন শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সান ফার্নান্দো ভ্যালির ওয়েস্ট হিলস এলাকায়। এ ছাড়া সিলমার এলাকার আগুন প্রায় ৮০০ একর এলাকা জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে কমে এসেছে।
দাবানল কেন লাগে, কোথায় লাগে
যখন কোনো অঞ্চলের আগুন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, বন্য পরিবেশে গাছপালা এবং উদ্ভিদে আগুন ধরে যায়, তাকে বলে দাবানল। বনাঞ্চল, তৃণভূমি, সাভানা এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্রে দাবানল দেখা যায়। লাখ লাখ বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে। কোনো নির্দিষ্ট মহাদেশ বা পরিবেশের মধ্যে এ দাবানল সীমাবদ্ধ নয়।
বছরের এই সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় সাধারণত কিছু দাবানল দেখা যায়। যখন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় না, তখন গাছপালা অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে যায়। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে বাতাসের প্রবাহ বেড়ে যায়, ফলে এই অঞ্চলে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানল দেখা যায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলেই দেখা যায় এ ধরনের দাবানল। যেখানে শুষ্ক আবহাওয়া ও প্রচুর গাছপালা থাকে, সাধারণত সেসব এলাকাগুলোতে বেশি দেখা দাবানলের ঘটনা ঘটে। আগে দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, এমন এলাকায় দাবানল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওরিগন, ওয়াশিংটন এবং নেভাদা ও অ্যারিজোনার কিছু অংশ দাবানলের জন্য পরিচিত। এখানে শুষ্ক গ্রীষ্ম, তীব্র বাতাস এবং বিস্তৃত বনাঞ্চল থাকায় দাবানলের ঝুঁকি অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে মারাত্মক দাবানল দেখা যায়। দেশটির ইতিহাসে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনার তালিকা বেশ দীর্ঘ।
এ ছাড়া স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি এবং গ্রিসের মতো দেশগুলোতে গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল হওয়ায় প্রায়ই দাবানলের ঘটনা ঘটে। বন নিধন ও জমি পরিষ্কার করতে মানুষের নানা কার্যকলাপের কারণে ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলে দাবানল ঘটে। সাইবেরিয়া এবং রাশিয়ার কিছু বনাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে দাবানল লাগে। বিশেষ করে যখন গাছপালা খুব শুকিয়ে যায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও দেখা যায় দাবানল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কিছু অংশে দাবানল দেখা যায়। চাষের জন্য জমি পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত ‘স্ল্যাশ-অ্যান্ড-বার্ন’ পদ্ধতির সঙ্গে এই অঞ্চলে দাবানল লাগার সম্পর্ক রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।