জুমবাংলা ডেস্ক : জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। অবসরে কিংবা ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য এই লাউয়াছড়া বন। সংরক্ষিত বনটি বিরল প্রজাতির নানা জাতের উদ্ভিদ ও প্রাণীতে ভরপুর। তবে পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত ভিড় ও হইহুল্লোড়ে অস্বস্তির মধ্যে পড়ছে এখানে বসবাস করা বন্যপ্রাণীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাউয়াছড়ায় বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদবৈচিত্র্য রয়েছে। পর্যটকদের অবাধ বিচরণ ও বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে এই সময় যানবাহনের অনেক ভিড় দেখা যায়। গাড়ির তীব্র শব্দ, হর্ন, দ্রুত বেগে যানবাহনের ছুটে চলা প্রাকৃতিক নীরবতাকে ভেঙে দেয়।
তারা জানান, দিনে কতসংখ্যক পর্যটকের প্রবেশ ও উপস্থিতি বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশের জন্য সহনীয়, এখনো তা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কারণে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বন্যপ্রাণীরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। ডাক থেমে যায় উল্লুকের, পাখির। তখন বনের গভীরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে সব প্রাণী।
বন বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। সরকার ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্যানটি ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, দুই প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।
লাউয়াছড়া উদ্যানের টিকিট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, এবারের দীর্ঘ ছুটিতে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাত দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৫৮১ জন দর্শনার্থী ঘুরতে গেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা।
লাউয়াছড়ায় অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক ও কোলাহলের কারণে প্রাণীর জন্ম, বিচরণ, প্রজনন ও বসবাসের অসুবিধা হয়, সেটা স্বীকার করেন পর্যটক শিমুল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘ছুটির সময় অনেক পর্যটকের সমাগমে বন্যপ্রাণীরা অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ সময় তারা গভীর বনে আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা দেওয়া হয়।’
পরিবেশকর্মী ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইকো ট্যুর গাইড সাজু মারছিয়াং বলেন, ‘ছুটির দিনগুলোতে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের কারণে বন্যপ্রাণীরা অস্বস্তিতে থাকে। এখনই পর্যটক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। তা না হলে বনের প্রাণ-প্রকৃতি বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাবে। শুধু চিৎকারই করা হচ্ছে, তা নয়। পলিথিন, প্লাস্টিক ফেলে পরিবেশকেও ধ্বংস করা হচ্ছে।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিউ’র সমন্বয়ক সোহেল শ্যাম বলেন, ‘আমরা বারবার বলি, লাউয়াছড়ায় প্রতিদিন কতজন পর্যটক প্রবেশ করবেন তা নির্ধারণ করা হোক। পর্যটকদের অবাধ প্রবেশ সীমিত করা হোক। লাউয়াছড়া আসলে বন্যপ্রাণীর জায়গা। তাদের জায়গায় গিয়ে হইহুল্লোড় করা কতটুকু সঠিক? মানুষের ভিড়, হইহুল্লোড়ে অনেক প্রাণীর প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এটা গবেষণার বিষয়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে পর্যটকদের যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। গাড়ির শব্দ, হর্ন ও মানুষের আনাগোনায় প্রাণীদের প্রাকৃতিক নীরবতা ভাঙে, তারা বিরক্ত হয়। বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট রেললাইনে ও বনের ভেতরের বিভিন্ন স্থানে ভিড় করে পর্যটকরা হইহুল্লোড় করেন। পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতির জন্য যা অনুচিত।’
মানুষের বিচরণে বন্যপ্রাণীরা একটু আড়ালে থাকে জানিয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার কাজী নাজমুল হক বলেন, ‘লাউয়াছড়ায় পর্যটক সীমিত করতে টিকিটের ফি বাড়ানো হয়েছে। কীভাবে পর্যটক সীমিত করা যায়, বিকল্প কী- তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।