লায়লাতুল শবে কদরের দোয়া হলো এমন একটি বিশেষ ইবাদত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাতের ফজিলত অর্জনে সহায়ক। হাদিসে বর্ণিত শবে কদরের দোয়া “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”—এই দোয়াটি রাসুল (সা.) নিজেই সাহাবিদের শিখিয়েছেন। লায়লাতুল কদরের দোয়া ছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে গোনাহ মাফ ও রহমতের জন্য দোয়াগুলো এই রাতে বেশি বেশি পড়া উচিত। এই রাতে আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও কল্যাণ কামনার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন।
শবে কদরের দোয়া: এই মহিমান্বিত রাতে ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায়
রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে অন্যতম বরকতময় রাত হলো শবে কদর বা লায়লাতুল কদর। এই রাতকে বলা হয় ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’। এ রাতে ফেরেশতারা জমিনে অবতীর্ণ হন, এবং প্রতিটি বিষয়ের ফয়সালা করা হয়। (সুরা কদর, আয়াত: ১–৫)
Table of Contents
এই রাতের শ্রেষ্ঠ আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দোয়া করা। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের জন্য এই রাতে একটি নির্দিষ্ট শবে কদরের দোয়া শিখিয়েছেন।
লায়লাতুল শবে কদরের দোয়া: হাদিসে বর্ণিত সর্বোত্তম দোয়া
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানি যে, আজ লায়লাতুল কদর, তবে কোন দোয়া পড়ব?”
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউন, তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা‘ফু ‘আন্নি।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি তো ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।
(তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)
এই রাতে শুধুমাত্র একটি দোয়াই নয়, বরং আরও অনেক কোরআনিক ও হাদিসের দোয়া পড়া যেতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ শবে কদরের দোয়া:
১. رَبِّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي
উচ্চারণ: রাব্বিগফিরলি ওয়ারহামনি
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন। (সুরা মুমিনুন: আয়াত ১১৮)
২. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا
উচ্চারণ: রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা
অর্থ: হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। (সুরা আরাফ: আয়াত ২৩)
৩. رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا
উচ্চারণ: রাব্বানা আমান্না ফাগফির লানা
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি, তাই আমাদের ক্ষমা করুন। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৬)
লায়লাতুল কদরের দোয়া পড়ার সময় ও নিয়ম
সময়: ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত।
স্থান: মসজিদে, ঘরে, অথবা একান্ত স্থানে।
ভঙ্গিমা: সেজদা অবস্থায়, নামাজ শেষে বা কান্নাকাটি করে একান্তভাবে।
এই রাতে দোয়ার মাধ্যমে মন খুলে আল্লাহর কাছে চাওয়া উচিত। কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নয়, নিজের ভাষায়ও দোয়া করা যায়।
শবে কদরের দোয়া: নিজের ও অন্যদের জন্য কীভাবে করবেন?
আপনার দোয়াতে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রাখুন:
নিজের গুনাহ মাফ
পরিবার ও স্বজনদের হেদায়েত
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি
জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি
শবে কদরের দোয়া ও লায়লাতুল কদরের দোয়া মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। এই মহিমান্বিত রাতে আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। তাই দুনিয়া ও আখিরাতের সব চাহিদা নিয়ে খালিছ মনে আল্লাহর কাছে হাত তুলুন। মনে রাখবেন, এক রাতের ইবাদত আপনার পুরো জীবন পরিবর্তন করতে পারে।
১৫ টি জরুরি দোয়া (অর্থসহ)
ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ফরজ ইবাদতের পর বিভিন্ন নফল ইবাদত করে থাকেন। নফল ইবাদতের মধ্যে জিকির ও দোয়া অন্যতম। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া অর্থসহ তুলে ধরা হলো:
১. আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম
অর্থ: বিতারিত শয়তানের হাত থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
২. বিস্মিল্লাহির রহমানির রাহিম
অর্থ: পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
৩. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আ’তিনা ফিদ্দুনিয়া হাছানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাঁও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ্, তুমি আমাকে ইহকালীন যাবতীয় সুখ-শান্তি ও পরকালীন যাবতীয় সুখ-শান্তি প্রদান কর। আর দোজখের আগুন থেকে আমাকে রক্ষা কর।
৪. মাতা-পিতার জন্য সন্তানের দোয়া
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাঈয়ানী সাগিরা।
সূত্র: সূরা বণী ইসরাইল, আয়াত ২৩–২৫
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি সেইভাবে সদয় হোন, তাঁরা শৈশবে আমাকে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।
৫. ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করার দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানা লা’তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব।
সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, সরলপথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিও না এবং তুমি আমাদের প্রতি করুনা কর, তুমিই মহান দাতা।
৬. ভুল করে ফেললে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির্লানা ওয়াতার হামনা লানা কুনান্না মিনাল খা’সিরিন।
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আমার নিজের উপর জুলুম করেছি। এখন তুমি যদি ক্ষমা ও রহম না কর, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।
৭. গুনাহ মাফের দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মায়াল আবরার।
সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯৩
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দাও, আমাদের থেকে সকল মন্দ দূর করে দাও এবং আমাদের নেক লোকদের সাহচার্য দান কর।
৮. স্বামী-স্ত্রী-সন্তানদের জন্য দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিইয়াতিনা কুররাতা আইইনিও ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমামা।
সূত্র: সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৭৪
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণ হতে নয়নের তৃপ্তি দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।
৯. ঈমান ঠিক রাখার দোয়া
উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা।
অর্থ: হে মনের গতি পরিবর্তনকারী, আমার মনকে সত্য দ্বীনের উপর স্থিত কর।
১০. সন্তানদের জন্য মাতা-পিতার দোয়া ও মাতা-পিতার জন্য সন্তানদের দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বিজ আলনী মুকীমাস সালাতি ওয়ামিন জুররি ইয়াতি, রাব্বানা ওয়াতাকাব্বাল দুয়া। রাব্বানাগফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
সূত্র: সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৪০-৪১
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ কায়েমকারী বানাও। হে আল্লাহ্, আমাদের দোয়া কবুল কর। হে আল্লাহ্, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
১১. নেক সন্তানদের জন্য দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিনাস সালেহীন।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নেককার সৎ-কর্মশীল সন্তান দান কর।
১২. অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার দোয়া
উচ্চারণ: ওয়াছলিহলি ফী যুররিইয়াতি, ইন্নি তুবতু ইলাইকা, ওয়া ইন্নি মিনাল মুসলিমীন।
সূত্র: সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫
অর্থ: আমার সন্তানদের জন্য আপনি সংশোধন দান করুন। আমি আপনার দিকেই ফিরে এসেছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
১৩. সমস্ত মুসলমানদের জন্য দোয়া
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাতি, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাতি।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে, সব মুমিন ও মুসলমান নর-নারীকে ক্ষমা করে দাও।
১৪. কাফেরদের বিরুদ্ধে বিজয়ের দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বানাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়ানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।
সূত্র: সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৭
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের গোনাহ ক্ষমা করো, সীমা লঙ্ঘনের জন্য আমাদের দোষ মাফ করো, আমাদের কদমকে দৃঢ় রাখো এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।
১৫. ক্ষমা ও রহমতের দোয়া
উচ্চারণ: রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো ও দয়া করো, তুমিই তো উত্তম দয়ালু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।