লায়লাতুল শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুসারে, এই মহিমান্বিত রাতে দুই রাকাত করে যত বেশি নফল নামাজ আদায় করা যায়, ততই সওয়াব পাওয়া যায়। শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নত। লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়মে নির্দিষ্ট কোনো সুরা বাধ্যতামূলক না হলেও মনোযোগ, খুশু এবং আন্তরিকতা থাকা জরুরি। এছাড়া এই রাতে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তিগফার করা এবং হাদিসে উল্লেখিত দোয়া “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” পাঠ করাও সুপারিশকৃত। শবে কদরের ইবাদত মুসলমানের জীবন পরিবর্তনের এক বিশাল সুযোগ।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম: পবিত্র রাতের ইবাদতের বিশদ বিবরণ
শবে কদর—যা কোরআনের ভাষায় লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত—একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। মহান আল্লাহ এই রাতে কোরআন নাজিল করেছেন। সুরা কদরে বলা হয়েছে, “এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সুরা কদর, আয়াত ৩)
Table of Contents
এই রাতে ইবাদতের গুরুত্ব:
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে এই রাতটি খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন রাসুল (সা.)।
লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম: কীভাবে নামাজ পড়বেন এই রাতে
লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী কিছু বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি:
নিয়ত (আরবি ও বাংলা):
আরবি: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ، نَفْلًا، مُتَوَجِّهًا إِلَى الْكَعْبَةِ، اللهُ أَكْبَرُ
বাংলা: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম—আল্লাহু আকবার।নামাজের রাকাত সংখ্যা:
শবে কদরের রাতে দুই রাকাত করে যত বেশি নফল নামাজ পড়া যায়, ততই উত্তম। অনেকে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেন।সুরা পঠনের নিয়ম:
প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যেকোনো ছোট সুরা যেমন:সূরা কদর
সূরা ইখলাস
আয়াতুল কুরসি
সূরা তাকাসুর ইত্যাদি পড়া যেতে পারে।
বিশেষ কোনো সুরা বাধ্যতামূলক নয়। মূল বিষয় হলো মনোযোগ ও খুশু-খুজু।
লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম ও ইবাদতের অন্যান্য দিক
শবে কদরের নামাজ ছাড়াও এই রাতে অন্যান্য ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত:
কুরআন তিলাওয়াত:
এই রাতে আল্লাহর কালাম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা উচিত।দোয়া ও ইস্তিগফার:
নবী করীম (সা.) আয়েশা (রা.)-কে যে দোয়া শিখিয়েছেন, সেটি বেশি বেশি পড়ুন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”তাহাজ্জুদের নামাজ:
রাতের শেষ প্রহরে অন্তত ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুসারে দোয়ার গুরুত্ব
এই রাতে আরও কিছু দোয়া যা কোরআন থেকে নেয়া এবং শবে কদরে পড়া যেতে পারে:
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন।رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا
হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদেরকে ক্ষমা করুন।رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي
হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর জুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
লাইলাতুল কদরের রাতের আমলসমূহ (সংক্ষেপে)
রাত জেগে ইবাদত করা
বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা
তিলাওয়াত, তাসবিহ, দোয়া ও ইস্তেগফার
গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি ও তওবা
লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম এবং শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুসরণ করে যদি একজন মুমিন মন থেকে ইবাদত করেন, তবে তার জীবনের সকল গোনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ আছে। এই পবিত্র রাতটি যেন আমাদের জীবনে নতুন এক আত্মশুদ্ধির সূচনা করে—এই দোয়াই করি।
FAQs: লায়লাতুল শবে কদরের নামাজের নিয়ম
Q1: শবে কদরের নামাজ কখন পড়তে হয়?
✅ শবে কদরের নামাজ রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে পড়া হয়, বিশেষ করে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখের রাত। লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী রাতের যেকোনো সময় নামাজ পড়া জায়েজ, তবে শেষ রাতের তাহাজ্জুদের সময় সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ।
Q2: শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত পড়া উত্তম?
✅ শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী, কমপক্ষে ১২ রাকাত এবং ইচ্ছেমতো বেশি নফল নামাজ আদায় করা যায়। লায়লাতুল শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হয়।
Q3: লায়লাতুল কদরের নামাজে কোন সূরা পড়া উচিত?
✅ লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম অনুসারে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি বা সূরা তাকাসুর পড়া উত্তম। তবে আপনি যেকোনো সুরা পড়তে পারেন যেটা আপনি মুখস্থ জানেন।
Q4: শবে কদরের নামাজের নিয়ত কীভাবে করতে হয়?
✅ শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী নিয়ত আরবিতে বা বাংলায় করা যায়।
বাংলা নিয়ত: “আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম—আল্লাহু আকবার।”
Q5: এই রাতে কি নির্দিষ্ট কোনো নামাজ আছে?
✅ লায়লাতুল শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই। তবে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তওবা, সালাতুত তাসবিহ, এবং দোয়ার নামাজ আদায় করা উত্তম।
Q6: শবে কদরের রাতে কি দোয়া পড়া উত্তম?
✅ হ্যাঁ, হাদিসে বর্ণিত দোয়া: اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি)
এই দোয়াটি লায়লাতুল কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত।
Q7: শবে কদরের নামাজ রাতে কখন শুরু করা উচিত?
✅ শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুসারে ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়জুড়ে আপনি এই নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে রাতের শেষ ভাগে ইবাদত করা বেশি বরকতময়।
Q8: লায়লাতুল কদরের নামাজ কি জামাতের সাথে পড়া যায়?
✅ সাধারণভাবে এই নামাজ নফল হওয়ায় একাকী পড়া উত্তম। তবে কেউ জামাতে পড়লে তা নিষিদ্ধ নয়, তবে নিয়মিত বা বাধ্যতামূলক নয়।
Q9: মহিলারা কি শবে কদরের নামাজ আদায় করতে পারেন?
✅ হ্যাঁ, নারীরা লায়লাতুল শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে একা বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করতে পারেন।
Q10: যদি কেউ নামাজ না জানে, কী করবেন শবে কদরের রাতে?
✅ নামাজ না জানলেও কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তাসবিহ, ইস্তেগফার এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী বরকতময় ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
📢 আপনিও ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি পূর্ণতা দিন, আর এই গাইডটি আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।