মো. রইছ উদ্দিন : কোনো ফসলেই ব্যবহার করেন না কীটনাশক। সার ব্যবহারেও তিনি সাশ্রয়ী। রয়েছে জৈবসার আর কেঁচোসার উৎপাদনের নিজস্ব কারখানাও। বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনে মডেল এই কৃষকের নাম মো. শহিদুল্লাহ (৪৬)।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় এবার লালিমা বা লাল বাঁধাকপি চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। সমখরচে অধিক লাভের কারণে প্রতিবেশী কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
মো. শহিদুল্লাহ গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের পুত্র।
গবেষণায় বলছে, লাল বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রঙিন বাঁধাকপি রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা। মূল্যও দ্বিগুণ। শহিদুল্লাহ নিয়মিতভাবে আলু, শশা, ডাটা, লাউ, ঢেঁড়শ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ, টমেটো, শিম, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপিসহ মৌসুমি শাকসবজি নিয়মিত চাষ করেন। জমির অধিক ব্যবহারের জন্য আমন ধান কেটে ফাঁকা সময়ে চাষ করেছেন সরিষাও। এবার সরিষা উত্তোলন করে সেই জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি জানান, রঙিন বাঁধাকপি আর সাধারণ বাঁধাকপি উৎপাদন খরচ একই। তবে রঙিন হওয়ায় এ বাঁধাকপির দাম দ্বিগুণ। তিনি বগুড়া থেকে ১ হাজার ১০০ বীজ এনে রোপণ করেছিলেন। একটাও মরেনি। ১০ শতাংশ জমিনে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ হবে।
তিনি আরও জানান, বাঁধাকপি ক্ষেতের ভিতরে ঝিঙ্গার বীজ রোপণ করা হয়েছে। আগাম ও নতুন সবজির অধিক মূল্য থাকে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, মো. শহিদুল্লাহ নতুন কোনো ফসলের খবর পেলেই তিনি সেটা চাষ করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় প্রথম লাল বাঁধাকপি চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, রঙিন ধরনের ধান-শাকসবজির প্রতি কৃষক শহিদুল্লাহর আগ্রহ অনেক বেশি। সেজন্য তিনিও প্রথমদিকে করলে অধিক লাভবান হন। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি আরও জানান, ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি হচ্ছে বাঁধাকপি। এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রক্তচাপ কমে, হজমশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, বাঁধাকপির জুস স্তন ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি কমায়। বয়ঃসন্ধির সময় নিয়মিত বাঁধাকপির রস খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭২ শতাংশ কমে যায়। এটি প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট জার্নালের এক গবেষণা অনুসারে, বাঁধাকপিতে থাকা আইসোথিয়োকানেটস ও ক্যারোটিনয়েডস উপাদান ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।