জুমবাংলা ডেস্ক: ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের একটি ছাদ। এর চারপাশে দেওয়া লোহার রেলিং। অর্ধেকটা দেয়াল করে নেট দিয়ে ঘেরা। বাড়ির এই ছাদেই পালন করা গরু। ১২টি গরু পালনের জন্য রয়েছে পৃথক খাবারের পাত্রও। এ ছাড়া তাপমাত্রা সহনশীল রাখতে গরুর জন্য ফ্যানের ব্যবস্থাও রয়েছে। ছাদ থেকে গরু নামাতে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে লিফট। এই লিফট দিয়ে নামিয়ে গরু তোলা হয় হাটে।
ব্যতিক্রম এই দৃশ্যের দেখা মিলবে যশোরের কেশবপুর পৌরসভার ভোগতী মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা খামারি নজরুল ইসলামের বাড়িতে। বাড়ির ছাদে ভিন্ন রকম এই খামার তৈরি চাঞ্চল্য তৈরি করেছেন তিনি।
আজ সোমবার সকালে ছাদে পালন করা ১২টি গরু একে একে লিফটে নামানো হয়। নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি লিফটে নামানো হয় গরুগুলো। এ খবর মুহূর্তে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ এক নজর দেখার জন্য হাজির হন ওই বাড়িতে। ছাদে গরু পালনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি ব্যতিক্রম ওই খামার যশোর জেলায় এটিই প্রথম।
নজরুল ইসলাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ছয় শতক জমির ওপর তার তিন তলা বাড়ি। শখ ছিল গরু পালনের। শহর এলাকায় জমির দাম বেশি হওয়ায় ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাড়ির ছাদে গরুর খামার করার পরিকল্পনা নেন। তিনি ভবনের সামনের অংশে নিজস্ব পদ্ধতিতে লোহার পাত, বেয়ারিং, চেইন, কাঠের পাটাতন ও মোটরের সাহায্যে লিফট তৈরি করেন। মোটর চালু করে ভেতরের কাঠের পাটাতনে গরু রেখে ওঠানামা করানো হয়। মোটরের সাহায্যে ওই লিফট দিয়ে একটি গরু তিন তলা থেকে নামাতে সময় লাগে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
গরু নামানোর দৃশ্য আসা মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি গ্রামের লিটন সরদার বলেন, ‘লিফট দিয়ে মানুষ ওঠানামা করতে দেখেছি। এই প্রথম দেখলাম লিফট দিয়ে গরু নামানোর দৃশ্য। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।’
কেশবপুর উপজেলার হাবাসপোল গ্রামের কলেজছাত্র মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘নিজস্ব পদ্ধতি দিয়ে খামারি নজরুল ইসলাম যেভাবে লিফট তৈরি করেছেন এতে বিশ্বাস হয় আগামী দিনে প্রযুক্তি নির্ভরশীল হয়ে মানুষ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবেন।’
ভোগতীনরেন্দ্রপুর গ্রামের এনায়েত আলী জানান, নজরুল ইসলামের ছাদের ওপরে গরুর খামার দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে ভিড় করেন।
ছাদ থেকে লিফটে গরু নামানোর জন্য চারজন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিক শাওন হোসেন বলেন, ‘গরু লিফট দিয়ে নামাতে খুবই মজা লেগেছে। কারণ গরুর সঙ্গে লিফটে বসে উঠানামা করা যায়।
অপর শ্রমিক মুজাহিদ হোসেন জানান, গ্রামাঞ্চলে কপিকল করে নিচ থেকে ওপরে কাঠের গুঁড়িসহ পড়ে যাওয়া গাড়ি ওঠানো হতো। এবার লোহার পাত, বেয়ারিং, চেইন ও মোটরের সাহায্যে তৈরি লিফট তাদের উদ্বুদ্ধ করছে।
খামারি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১২টি গরু আজ সকালে লিফটের মাধ্যমে একটি একটি করে নামানো হয়। লিফট থেকে গরু ট্রাকে নিয়ে কোরবানির জন্য বিক্রির উদ্দেশ্যে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল পশু হাটে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গরুর ওজন আনুমানিক ৫ থেকে ৬ মণ। একেকটি গরু দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে বিক্রি করার আশা রয়েছে। যশোর জেলার ভেতর তিন তলা ভবনের ছাদে গরুর খামার আমারটিই প্রথম।’
‘এলাকায় প্রায় গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সে আতঙ্ক থেকে ছাদের ওপর খামার করেছি। সেখানে গরু নেওয়ার কাজ সহজ করতে নিজস্ব পদ্ধতিতে ওই লিফট তৈরি করা হয়েছে।’ চোরের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিন তলা ভবনের ছাদ গরু পালনের জন্য নিরাপদ বলেও জানান এই খামারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।