বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মহাকাশযানের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে এবার লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
অতীতে মহাকাশ থেকে যে কোনো ধরনের তথ্য পাঠাতে সংস্থাটিকে নিজস্ব ‘ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের’ রেডিও সিগনালের ওপর নির্ভর করতে হতো। তবে, মহাকাশযানের ডেটা পাঠানোর সে সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির সুযোগ আছে লেজার প্রযুক্তির ব্যবহারে। আর নাসা চাঁদের দিকে এই প্রযুক্তি পাঠাতে প্রস্তুত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট স্পেস ডটকম।
‘ওরিয়ন আর্টেমিস ২ অপটিকাল কমিউনিকেশন সিস্টেম (ওটুও)’ নামের টার্মিনালের মাধ্যমে পরবর্তী আর্টেমিস ২ মিশনে এই লেজার যোগাযোগ ব্যবস্থা যোগ করছে নাসা। আর এটি হতে যাচ্ছে চাঁদের চারপাশ পরিক্রমণের উদ্দেশ্যে মহাকাশ সংস্থাটির পরবর্তী যাত্রীবাহী অভিযান।
“ওরিয়ন ক্যাপসুলের মধ্যে ‘ওটুও সিস্টেম’ চাঁদের বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চ রেজুলিউশনের ছবি ও ভিডিও পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবে।” –এপ্রিলে প্রকাশিত এক ভিডিও’তে বলেছে নাসা।
সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে এই ব্যবস্থা পৃথিবীর দর্শকদের ‘রিয়েল টাইমে’ চাঁদ দেখার সুবিধা দিতে পারে, যা আগে কখনও ঘটেনি।
স্পেস ডটকম বলছে, এর তুলনা করা যায় বেশ কয়েক বছর ডায়াল আপ ইন্টারনেট চালানোর পর অপটিকাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে। আর ভবিষ্যতে মহাকাশযানে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রত্যাশাই করছে নাসা।
ভবিষ্যতে লেজার যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কিছু স্যাটেলাইটে এর পরীক্ষা চালিয়েছে নাসা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘লেজার কমিউনিকেশন রিলে ডেমোস্ট্রেশন (এলসিআরডি)’ নামে নিজেদের প্রথম ‘লেজার রিলে’ উৎক্ষেপণ করেছিল মহাকাশ সংস্থাটি। আর গত বছর ‘টেরাবাইট ইনফ্রারেড ডেলিভারি (টিবার্ড)’ নামের কিউবস্যাট উৎক্ষেপিত হয়। আর এর ‘ডেটা ট্রান্সমিশন রেট’ প্রতি সেকেন্ডে পৌঁছেছিল দুইশ গিগাবিট পর্যন্ত।
এখন ‘ইন্টিগ্রেটেড এলসিআরডি লো-আর্থ অর্বিট (এলইও) ইউজার মডেম অ্যান্ড অ্যামপ্লিফায়ার টার্মিনাল (আইএলএলইউএমএ-টি)’ নামে এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে নাসা। আর এই বছরের শেষ নাগাদ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে পারে এটি।
একবার এই প্রযুক্তি চালু হলে এটি নাসার প্রথম এন্ড-টু-এন্ড লেজার রিলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ‘এলসিআরডি’র মাধ্যমে পৃথিবীতে ডেটা ফেরত পাঠাবে, যা আর্টেমিস ২ মিশনের ওরিয়ন ক্যাপসুলে থাকা ‘ওটুও’ ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
এর পরও সাম্প্রতিক এক ভিডিওতে নাসা বলেছে, ‘বিভিন্ন লেজার যোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে আমাদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি করছে’, এইসব পরীক্ষা কেবল এর শুরুর ধাপ।
গত বছর আর্টেমিস ১ মিশনের সাফল্যের পর আর্টেমিস ২ মিশন নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে, যেখানে ১৯৭২ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো চাঁদের উদ্দেশ্যে মানুষ পাঠাবে নাসা। এর প্রথম চন্দ্রাভিযানে ওরিয়ন ক্যাপসুলে সংযুক্ত ক্যামেরায় চাঁদের তোলা বিভিন্ন ছবি গোটা বিশ্বকেই মোহিত করেছে।
আর্টেমিস ২ মিশনে নভোচারী থাকায় নাসা এতে শুধু উচ্চ রেজুলিউশনের ছবি নয় বরং ভিডিও’ও আশা করছে। এইসব লেজার পরীক্ষা পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে বিশ্ববাসী ওরিয়ন ক্যাপসুলের জানালা থেকে দৃশ্যমান চন্দ্রপৃষ্ঠের চমকপ্রদ ব্যাকগ্রাউন্ডের পাশাপাশি নভোচারীদের কাছ থেকে অসংখ্য লাইভ আপডেট দেখতে পাবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে স্পেস ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।