জুমবাংলা ডেস্ক : শখের বশে অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ রাখা শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ বুলবুল। অ্যাকুরিয়ামে লাল, নীল, হলুদ, কালোসহ বাহারি রঙের মাছের ছোটাছুটি তাকে আনন্দ দিতো। একপর্যায়ে ইচ্ছা জাগে প্রজননের মাধ্যমে এসব মাছ উৎপাদন করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ।
প্রথম দিকে বাড়িতে কয়েকটি ড্রামে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। সেখানে মাছগুলো বড় হতে থাকে। কয়েক মাস পর তা বিক্রিও করেন। শখের বশে অ্যাকুরিয়ামে মাছ পোষা ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ বুলবুল চার বছর আগে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ‘বুলবুল এগ্রোফার্ম’ নামের রঙিন মাছের খামার।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকার সন্তান হাবিবুল্লাহ বুলবুল ঢাকা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউড থেকে ইলেকট্রনিকসের ওপর ডিপ্লোমা করে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাস্টার কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িক্ত পালন করছেন। তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক। সংসার জীবনে তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
প্রকৃতিপ্রেমী বুলবুল পছন্দ কৃষিকাজ। পেশাগত কর্মের ফাঁকে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন বাহারি রঙের মাছের খামার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে উপজেলার তারাব পৌরসভার গন্ধর্বপুর নামাপাড়া এলাকায় ৫৪ শতাংশ জমির ওপড় ‘বুলবুল এগ্রো ফার্ম’ নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এ খামারে উৎপাদিত রঙিন মাছ আশপাশের জেলাসহ ঢাকার অ্যাকুরিয়ামের দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বুলবুল এগ্রো ফার্মের গেটের কাছেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য একটি শেড। একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে রঙিন মাছ চাষের জন্য তৈরি করা সারি সারি চৌবাচ্চা। যেখানে রয়েছে বাহারি সব রঙিন মাছ।
ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ বুলবুল বলেন, কুষ্টিয়ার গ্রামীণ জনপদে আমার জন্ম হলেও বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় ঢাকাতেই আমার বেড়ে ওঠা। তবুও কৃষি আমার পছন্দের জায়গা। পেশাগত জীবনে আমি একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাস্টার কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িক্ত পালন করলেও কর্মব্যস্ততার মাঝেও কৃষিপ্রীতি আমাকে টানে।
তিনি বলেন, অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ চাষ এবং ছোট ছোট ড্রামে মাছের রেণু ফোটানো শখ ছিল। কিছুদিন পরপরই মাছগুলো ডিম দিতো। এভাবে চলতে চলতে মাছের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এভাবেই রঙিন খামার করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। ধীরে ধীরে এই নেশা থেকেই ছোট্ট পরিসরে একটি রঙিন মাছের খামার তৈরিতে হাত দেই । দীর্ঘ চাকরি জীবনের সঞ্চয় দিয়ে রূপগঞ্জে বাড়ি করার জন্য কেনা জায়গায় পরিশেষে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করি। প্রতিষ্ঠা করি ‘বুলবুল এগ্রো ফার্ম’ নামের রঙিন মাছের খামার।
১৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭ ফুট প্রস্থের প্রায় ২০টি চৌবাচ্চায় এক লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের রঙিন মাছ কিনে চাষ শুরু করেন বুলবুল। চৌবাচ্চা, আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র ও রঙিন মাছ কেনা বাবদ ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়।
গতমাসে ৪৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন বুলবুল। খামারে এখনো প্রায় চার লাখ টাকার মাছ রয়েছে। এসব রঙিন মাছের মধ্যে রয়েছে হোয়াইট মলি, গোল্ডেন মলি, গোলডাস্ট মলি, অরেন্ডা গোল্ডফিশ, কমেট, কইকার্প, মিক্সড গাপ্পি, স্নেক স্কিন গাপ্পি এবং ফাইটারসহ বেশ কিছু প্রজাতি।
রঙিন মাছের খাবার হিসেবে অ্যাকুরিয়াম ফিশ ফিড খাওয়াতে হয়। মাঝে মধ্যে আলু সিদ্ধ, শসা, গাজর সিদ্ধ খাওয়ানো হয়। সঠিক নিয়মে পালন করলে রোগ খুব কম হয়। আর রোগ হলে বিভিন্ন ওষুধ ও পরিচর্যা করতে হয় বলে জানান এ খামারি।
উপজেলার কর্নগোপ এলাকা থেকে রঙিন মাছ কিনতে আসা ক্রেতা মাহফিজুর রহমান রুবেল বলেন, অ্যাকুরিয়ামের জন্য মাছ নিতে এসেছি। অনেক প্রজাতির মাছ থেকে পছন্দ করে গোল্ডফিশ, কমেট, কইকার্প, স্নেক স্কিন গাপ্পি কিনলাম। খামারে অসংখ্য মাছ থেকে বেছে কিনতে পেরে ভালো লাগছে।
উপজেলার তারাব পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম মনির বলেন, বুলবুল ভাইয়ের খামারের রঙিন মাছ দেখে এলাকার অনেকেই এখন বাড়িতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ পুষছেন। এতে উপজেলায় অ্যাকুরিয়ামে মৎস্য চাষে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিগান মোল্লা বলেন, খামারের মালিক যথেষ্ট সচেতন। তিনি প্রাকৃতিক খাবার পরিবেশনে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মাছচাষ ও পশুপালন করছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছমিয়া তাছমীম বলেন, এখন আমাদের দেশে অ্যাকুরিয়ামে রঙিন মাছ পোষা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাসাবাড়ি, শপিংমল, হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি দোকানেও এখন অ্যাকুরিয়াম শোভা পাচ্ছে। মাছ চাষিদের এই সেক্টরে আগ্রহী করা গেলে এবং সঠিক প্রজনন ও চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।