
জুমবাংলা ডেস্ক : বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একমাত্র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুল আজাদ। এফসিপিএস ডিগ্রিধারী এই চিকিৎসক বরগুনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র প্রশিক্ষিত চিকিৎসক।
করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক হওয়ায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের পুরো দায়িত্ব এখন ডা. মো. কামরুল আজাদের কাঁধে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত সেবা দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দিতে হয় তাকে।
গত তিন মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা প্রায় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। বর্তমানেও তার অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুইজন করোনা রোগীসহ করোনা সন্দেহভাজন আরও সাতজন রোগী। একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হওয়ায় কখনও কখনও অনেক রাতেও তাকেই ছুটে আসতে হয় করোনা সন্দেহভাজন মুমূর্ষু রোগীদের কাছে। ইতোমধ্যেই তার তত্ত্বাবধানে থাকা ১১ জন করোনা পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়ে ফিরেছেন স্বজনদের মাঝে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনো চিকিৎসক সাতদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিলে তাকে পরের ১৪ দিন কোয়রেন্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হওয়ায় গত দেড় মাসে বাস্তবিক অর্থে একদিনের জন্যও কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। তিনি টানা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা দিতে হয় ডা. মো. কামরুল আজাদকে। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীদের পুষ্টিকর খাবার এবং গরম পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থাসহ রোগীদের কিছু কিছু বিশেষ ওষুধও যোগার করে দিয়েছেন তিনি। এসব কারণে হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে ডা. কামরুল আজাদের গড়ে উঠেছে এক অন্য রকম সখ্যতা।
অন্যদিকে জেলার অন্য ছয়টি উপজেলায় চিকিৎসাধীন থাকা করোনা রোগীসহ সাধারণ রোগীদের মোবাইল ফোনেও চিকিৎসা পরামর্শ দেন ডা. কামরুল আজাদ। এতে মানসিকভাবে শক্তি পাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীসহ অন্য রোগীরাও। তার উদ্যোগে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি বুথ স্থাপন করেছে স্থানীয় একটি উন্নয়ন সংগঠন। এসব কারণে এই চিকিৎসককে নিয়ে গর্বিত তার বাবা-মাসহ পুরো বরগুনাবাসী।
সম্প্রতি করোনা ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মো. রাব্বি বলেন, ‘আজাদ স্যারের লগে কথা কইয়াই আমাগো রোগ অর্ধেক ভালো অইয়া গেছে। তার মত ডাক্তার আমাগো দ্যাশে খুব দরকার। শুধু আজাদ স্যার না, তার অধীনের সকল স্টাফই খুব দয়াশীল।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজের অর্থ ব্যয় করে হাসপাতাল চত্বরে তাঁবু খাটিয়ে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী ও সাধারণ রোগীদের বাছাই করার জন্য দুই কক্ষের একটি রোগী বাছাই কেন্দ্রও খুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে ডা. কামরুল আজাদের বাবা মো. আমীর হোসেন বলেন, দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে আমার ছেলে যে ভূমিকা রেখেছে, তাতে একজন বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।
মা আলেয়া ফেরদৌসি বলেন, আজাদের জন্য সব সময় চিন্তা হয়। তারপরও ভালো লাগে এজন্য যে- আমার সন্তানের জন্য অনেক মা তার সন্তানকে সুস্থভাবে ফিরে পেয়েছেন।
ডা. কামরুল আজাদের স্ত্রী নাইরার আফরিন বলেন, স্ত্রী হিসেবে স্বামীর এমন সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য গর্ববোধ করি। কারণ একটু হলেও দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি অবদান রাখতে পেরেছেন। তিনি যেন সুস্থ থেকে তার এই কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন এজন্য সবার দোয়া চাই।
প্রতিদিন করোনার সঙ্গে লড়ে যাওয়া ডা. কামরুল আজাদ বলেন, বরগুনায় আমি ছাড়া অন্য কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নেই। তাছাড়া গত বছর আমার একারই তিন শতাধিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হয়েছে। এসব কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। বরগুনায় অন্য কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ না থাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে, এটা জানতাম। তাই আমি সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।