শবে বরাত অর্থাৎ ‘লাইলাতুল বরাত’ (আরবি: لَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ) ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এটি শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতে পালিত হয়। এই রাতকে বরকতময় ও মাগফিরাতের রাত বলা হয়। মুসলমানরা এই রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, কবর জিয়ারত এবং নফল রোজা রাখেন।
শবে বরাতের ইতিহাস:
শবে বরাতের ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস পাওয়া যায়।
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)
২. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম। আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে (মদিনার কবরস্থান) পেলাম। তিনি বললেন, শাবান মাসের মধ্যরাত হলো, আল্লাহ তায়ালা এই রাতে বান্দাদের প্রতি দয়া করেন, ক্ষমা করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন।” (মুসনাদে আহমদ: ২৬০২২)
শবে বরাতের আমল ও রোজা:
শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, কোরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। এছাড়াও শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখার সুন্নত আমল রয়েছে।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন শাবান মাসের মধ্যরাত আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনটিতে রোজা রাখো।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)
শবে বরাতের রোজার নিয়ত (বাংলা উচ্চারণ):
নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান লিল্লাহি তা’আলা।
(অর্থ: আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম।)
শবে বরাতের রোজার নিয়ত (আরবি):
نَوَيْتُ أَنْ أَصُوْمَ غَدًا لِلَّهِ تَعَالَى
নিয়ত করার সময়:
শবে বরাতের রোজার নিয়ত করতে হবে সুবহে সাদিক (ভোর) শুরুর আগেই। তবে যদি কেউ রাতে নিয়ত করতে ভুলে যান, তাহলে সুবহে সাদিকের পূর্বে কিছু না খেয়ে থাকলে এবং সারাদিন রোজার নিয়তে থাকলে তার রোজা হয়ে যাবে।
উপকারিতা ও ফজিলত:
- এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
- রিজিক বৃদ্ধি ও বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া কবুল হয়।
- এই রাতে ইবাদত করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
- রোজা রাখলে গুনাহ মাফ হয় ও জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।
করণীয় ও বর্জনীয়:
- শবে বরাতে বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা জরুরি।
- এই রাতে আতশবাজি, হালুয়া-রুটির নামে অপচয় করা ঠিক নয়।
- এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
শেষ কথা:
শবে বরাত মুসলমানদের জন্য বিশেষ রহমতের রাত। এ রাতে ক্ষমা, রহমত ও মুক্তি লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত এই রাতের মর্যাদা বুঝে যথাযথ ইবাদত-বন্দেগি করা এবং শবে বরাতের পরদিন নফল রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।