জুমবাংলা ডেস্ক : বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে কথা রাখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর ভিপি নুর-রাব্বানীসহ নির্বাচিতরা। নির্বাচনের কয়েক মাস পরও শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়া এবং জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজিসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। আধিপাত্য বিস্তার করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে এজিএস সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, নির্বাচনের পর জয়ী হয়ে প্রথম নিজের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। এরপর এপ্রিল মাসে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের বিচার চেয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে যান তিনি। সেখানে ছাত্রলীগ নেতাদের হামলার শিকার হন তিনি।
এসএম হল সংসদের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, নুর নিয়ম ভেঙে হলে এসেছেন। তিনি আসার আগে হল সংসদের কাউকে জানাননি। তবে তিনি হামলার শিকার হলেও তার বিচার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলেই যাননি তিনি। এতে শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, তিনি ডাকসুর ভিপি অথচ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করে বেড়ান কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররা কোন অবস্থায় থাকেন, এসব খবর নেন না।
এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি। তবে কিছুটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রদলসহ অনেকেই হামলার শিকার হয়েছে। তবে আগে এ সমস্যা অনেক বেশি ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছি। আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা দূরুত্বের সম্পর্ক ছিল। এখন সেটা কমে গেছে। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই মূলত ডাকসু। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে, ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মের অভিযোগ থাকায় তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থেকে পদচ্যুত হন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেননি। যদিও গেল বুধবার ক্যাম্পাসে জোবাইক উদ্বোধনকালে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনিও ডাকসুতে যথাযথভাবে কাজ করতে পারছেন না। তবে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ‘টর্চার সেল’ করার অভিযোগ আসায় তিনি এ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আগে ঢাবিতে কোনো গণতান্ত্রিক অবস্থান ছিল না। এখন আমরা সেটি করতে পেরেছি। আমরা প্রায় ৩৫টি বিভাগে উন্নয়ন ফি কমিয়েছি। ডাকসুর সম্পাদক এবং সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। তারা ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছে।
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হন চিবল সাংমা। নির্বাচনের আগে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ব্যাপক কাজ করবেন বলে মুখের বুলি আওড়ান কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর দুয়েকটি কাজ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়েনি। অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাকে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের প্যানেলে নির্বাচন করান। যাতে চিবল সাংমার মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি পান।
ডাকসুর এ নেতা বলেন, আমি যতটুকু পারি কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি কাজ করেছি। কয়েক মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করতে চাই।
এছাড়া, ডাকসুর কমন রুম এবং ক্যাফেটারিয়া বিষয়ক সম্পাদক লিপি আক্তার, ডাকসুর সদস্য তিলত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, ফরিদা পারভীন, রায়সা নাসের, মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল এবং রফিকুল ইসলাম সবুজকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
ডাকসুর কর্মকাণ্ড নিয়ে কবি জসীম উদদীন হলের ছাত্র মাহমুদ হাসান বলেন, ডাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা ছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো কাজ ডাকসু করতে পারেনি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, আমাদের হলে আগে যে সমস্যা ছিল, তা এখনও আছে। বারান্দাতে শিক্ষার্থীরা ঘুমান, হলের ক্যান্টিনে কয়েক বছর ধরে যে সমস্যা ছিল তা এখনও বিদ্যমান। মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। রোকেয়া হলের ছাত্রী আফিফা জাহান বলেন, আমাদের হল আগে থেকে যা ছিল সেভাবেই আছে। মেয়েদের হলগুলো ছেলেদের তুলনায় অনেক ভালো আছে। তবে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ইশতেহারে ফুলঝুরি বাস্তবে ভিন্ন : নির্বাচনের আগে ইশতেহারে ফুলঝুরি ছড়িয়েছিলেন ডাকসু প্রতিনিধিরা। তাদের ইশতেহারের মধ্যে ঢাবিকে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করা, সব কার্যক্রম অটোমেশনের আওতাভুক্ত, মানহীন সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল, সাত কলেজের অধিভুক্তি পুনর্বিবেচনা, অবৈধভাবে আদায়কৃত বর্ধিত হল ও বিভাগ ফি এবং জরিমানা বন্ধ করা, ক্যাম্পাসে অবাধ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ও রাত ১০টার পর প্রাইভেট পরিবহন বন্ধ এবং ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, হলের খাবারের মান উন্নয়নে ভর্তুকি বৃদ্ধি, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, সব শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য বীমা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি, আদিবাসী ও পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সাত মাস অতিবাহিত হলেও এসব ইশতেহারের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো কিছু হয়নি। বরং বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে তাতেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তবে ডাকসুর কয়েকজন নেতার নেওয়া দৃশ্যমান উদ্যোগের মধ্যে আছে কয়েকটি বিভাগে উন্নয়ন ফি কমানো, হলের ফি কমানো, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ, কয়েকটি রুটে পরিবহন বৃদ্ধি, লাইব্রেরি খোলার সময়সীমা ২ ঘণ্টা বাড়ানো ইত্যাদি। যদিও শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট নন। এদিকে ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। এতে প্রধান অতিথি করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।