জুমবাংলা ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ পৌর এলাকার রঘুনাথপুরের কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে পড়াশোনাা শেষ করেছেন। পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে, বেছে নিয়েছেন কৃষি কাজ।
মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়েই কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ। বর্গা নেওয়া জমিতে তিনি ধান, গম, ভূট্টা, সরিষা, বিভিন্ন ধরণের সবজি ও ফলসহ নানা ধরণের কৃষির বাণিজ্যিক চাষ করছেন। তার কৃষি কাজে সাফল্য বেকার শিক্ষিত যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।
কৃষি উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ জেলার পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে। স্ত্রী, মা, দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়েই তার সংসার।
বিদ্যুৎ বলেন, আমি পড়াশুনা শুরু করি মাদরাসায়। যখন ২০০৩ সালে মাদরাসা থেকে এসএসসি পাস করি তখন আমার বাবা মারা যান। তারপর থেকে আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমি মাদরাসা থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হই। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে পড়াশুনা ও সংসার খরচ চালাতাম।
তিনি আরো বলেন, পড়াশুনা শেষে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দেয়া শুরু করলাম। তেমন সুবিধে করতে পারিনি। তাই আর চাকরির পেছনে ছুটিনি। এক পর্যায়ে গ্রামে এসে শুরু করি আমের ব্যবসা। ব্যবসায় তেমন লাভ না পেয়ে শুরু করলাম কৃষি কাজ। আসলে ইচ্ছা থাকলে কৃষি কাজ করে অনেক কিছু করা যায়। তাই আমি কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। কথার এক ফাঁকে তিনি আরো বলেন, গ্রামে এসে হঠাৎ করে বিয়ে করলাম। আমার বউ মুস্তারিন আক্তার রানিশংকেল আবাদ কাচিয় দাখিল মাদরাসায় কামিল দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।
বিদ্যুৎ আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে কৃষি কাজ করছি বলে গ্রামের মানুষ নানা ধরনের কথা বলেন। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমি আর আমার স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত। আমার কৃষি কাজে স্ত্রী যথেষ্ট সাহায্য করে আমাকে। মাঠে কাজ করার সময় সে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে। আমরা মাঠে এক সঙ্গে খাবার খাই। কৃষি কাজে অন্য রকম এক আনন্দ আছে।
বিদ্যুতের স্ত্রী মুস্তারিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে গ্রামে এসে কৃষি কাজ করছেন দেখে প্রথমে খুব খারাপ লাগত। তবে এখন খারাপ লাগাটা আর নেই। এখন আমি আমার স্বামীকে কাজে সহযোগিতা করি।
পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার জয়নাল আবেদিন বাবুল ও মনসুর আহমেদ নামে দুই সাংবাদিক জানান, ছোটবেলায় বিদ্যুতের বাবা মারা যায়। জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে। আর এখন কৃষি কাজ করেও সফলতা অর্জন করে চলেছে বিদ্যুৎ। নিয়মিত ও বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করে ভালো করছে বিদ্যুৎ। যা দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
চাকরির পিছনে না ঘুরে এভাবে শিক্ষিত ছেলেরা কৃষিতে আসলে কৃষিতে আমাদের আরো উন্নয়ন হবে বলেও জানান এই দুই সাংবাদিক। ইচ্ছে শক্তি থাকলে আসলে সব করা যায়। সব কিছু করা সম্ভব। সেটা আবারো প্রমাণ করেছেন বিদ্যুৎ।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার কে এম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স শেষ করে কৃষি কাজ করছেন। আমি এটা ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। এটা বেকার যুবকদের জন্য অনুসরণীয়। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত। তাদের ইচ্ছে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। আমরা তাদের ইচ্ছেকে সাধুবাদ জানাই। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পেলে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, বর্তমান প্রজন্মের ছেলে চাকরি ও ব্যবসায় নির্ভর হয়ে পড়েছে। গ্রামের ছেলেরা এখন আর কৃষি কাজে উৎসাহ পায় না বা এ কাজ করতে লজ্জা বোধ করে। সেই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিত বেকার ছেলেরা এদেশের সম্পদ। সে যেভাবে কৃষিতে এগিয়ে এসেছে, তাকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানাই। তিনি বর্তমানে সারাদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য আইডল। আর অল্প অল্প করে হলেও কয়েক বছরে কৃষি বেশ ভালো এগিয়েছেন বিদ্যুৎ। এভাবেই কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়ে উঠেছেন বিদ্যুৎ।
তিনি বলেন, ‘ধান, গম, ভূট্টা, সরিষা, বিভিন্ন ধরণের সবজি ও ফলসহ সব ধরণের কৃষির বাণিজ্যিক চাষ করছেন বিদ্যুৎ। আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের এবং উপজেলা কৃষি অফিস হতে তাকে কৃষি সর্বাতœক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আশা করি বিদ্যুৎ একদিন দেশ সেরা কৃষি উদ্যোক্তা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এ কৃষিবিদ।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।