জুমবাংলা ডেস্ক : সুন্নতে খতনা করাতে এসে শিশু আহনাফ তাহমিন আয়হাম (১০) মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারটিতে (জেএস হাসপাতাল) তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে দুজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ। হুঁশিয়ার দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দোষীদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার রাতে জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনার পর শিশুর বাবা মোহাম্মদ ফখরুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় জে এস হাসপাতালের ডা. এস এম মুক্তাদিরসহ ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫ জনকে আসামি করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসক হলেন জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডা. এস এম মোক্তাদির হোসেন ও চিকিৎসক মাহাবুব মোরশেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আয়হামকে সুন্নতে খতনা করানোর জন্য বাবা ফখরুল আলম হাতিরঝিল থানার জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক এস এম মুক্তাদিরের কাছে নিয়ে যান। তিনি ওই সময় আয়হামের কিছু শারীরিক পরীক্ষা করাতে বলেন। পরে ওই হাসপাতালেই টেস্টগুলো করে ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে যান ফখরুল। রাতে চিকিৎসক ফোন করে জানান, রিপোর্টগুলো ভালো আছে। সুন্নতে খতনা করতে কোনো সমস্যা নেই।
পরে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৮টায় ছেলের সুন্নতে খতনা করানোর জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান ফখরুল। ছেলেকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাওয়া হয়। ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে বলে জানিয়েছিল চিকিৎসকেরা। তবে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগায় ফখরুল ওটি রুমে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে নিষেধ করে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলা হয়।
পরে ফখরুল জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখেন, তাঁর ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তার বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছে এবং নাকে ও মুখে নল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন চিকিৎসক এস এম মোক্তাদিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক উত্তর দেননি। এরপর তাঁকে তখন জোর করে ওটি থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঘণ্টা দুয়েক পর ফখরুল জোর করে ওটিতে প্রবেশ করে জানতে পারেন তাঁর ছেলে আয়হাম মারা গেছে।
গ্রেপ্তারের পর কারাগারে দুই আসামি
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসককে গতকাল বুধবার আদালতে তোলা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাতিরঝিল থানার এসআই রুহুল আমিনের রিমান্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই সঙ্গে দুই চিকিৎসককে দুই দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।
যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। সে ঘটনায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিয়েছি। তবে সেই ঘটনার পরও যারা সতর্ক হতে পারেনি, এরকম আর কারো কোনরকম দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দোষী প্রমাণিত হলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বিরুদ্ধে শুধু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াই হবে না, ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারী দোষীদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে পরবর্তিতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এরকম গুরু দায়িত্বে অবহেলা করতে সাহস না পায়। চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হানা
ঘটনার পর গতকাল বুধবার মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান। তিনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেন। বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে হবে।
সিলগালা শেষে সেন্টারটির মূলফটকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত একটি নির্দেশনা টাঙানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আহনাফ তাহমিন আয়হাম নাসেরের সুন্নতে খতনার সময়ে মৃত্যু সংক্রান্ত-অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার ও জেএস হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
যা বলছে আয়হামের পরিবার
আহনাফের বাবা ফখরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চিকিৎসককে বলেছিলাম যেন, ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়। তারপরও আমার ছেলের শরীরে সেটি পুশ করেন ডা. মোক্তাদির। আমি বারবার তাদের পায়ে ধরেছি। আমার ছেলেকে যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়।’
ফখরুল বলেন, ‘আমার সন্তানকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় মোক্তাদিরসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবারই। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে পাঁচ বছরের শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।