লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্তমানে প্রায় সবাই মাংসের দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণরা মাছ খেতেই চায় না। অথচ তাদের পছন্দের মাংস শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবার অনেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চর্বিযুক্ত মাংস ও মাছ এড়িয়ে চলেন। কিন্তু মাছ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। মাছ ও মাছের তেল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ওমেগা-৩ অ্যাসিড নিয়ে বর্তমানে অনেক আলোচনা ও গবেষণা হচ্ছে। এ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হৃদপিণ্ড সুরক্ষার পাশাপাশি আরো অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এ উপাদান গ্রহণ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেলথ বলছে, মাত্র ৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান মাছের তেল গ্রহণ করেন। পুষ্টিবিদরা বলছেন, বেশির ভাগ মানুষই মাছের তেল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে এবং এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকে। গবেষণা ও পুষ্টিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে চলুন জেনে নিই মাছের তেলের স্বাস্থ্যগুণ—
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে
মাছের তেল দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পরিচিত। সার্ডিন্স, অ্যাংকোভিজ ও ম্যাকেরল ধরনের ফ্যাটযুক্ত মাছ থেকে প্রাপ্ত তেল দুই ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে। আইকোস্যাপেন্টেইনোইক অ্যাসিড (ইপিএ) ও ডকোসাহেক্সেনিক অ্যাসিড (ডিআইচএ) নামের এ দুই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কম প্রদাহকে সহায়তা করতে এবং দেহের প্রদাহবিরোধী অবস্থানকে উন্নতি করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ও নিম্ন-গ্রেডের প্রদাহ অকাল বয়স ও বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। মাছ থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
হৃদপিণ্ড সুরক্ষায় কার্যকরী
মাছের তেল এইচডিএল কোলেস্টেরলের ভালো একটি উৎস, রক্তের চর্বি কমানো, রক্তচাপ কমানো, ধমনী বাধা এড়ানো এবং ধমনী শক্ত হওয়া ঠেকাতে সহায়তা করে। এসব কারণে পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন হূিপণ্ড সুরক্ষায় মাছের তেল কার্যকরী। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে জেএএইচএ জার্নালে প্রকাশিত একটি মেটা-বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক মাছের তেল থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হূিপণ্ডের আক্রমণ এবং হূদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে
আমেরিকান খাদ্যে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করা সাধারণ, যা উদ্ভিদ তেলে পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা অন্য মানুষদের ক্ষেত্রে কম বা আমাদের উপমহাদেশের খাদ্যে সামুদ্রিক মাছের প্রভাব কম। আবার ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। আর এ অ্যাসিডের সুসংবাদটি হলো, উচ্চতর ওমেগা-৩ গ্রহণের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকতে দেখা গেছে। এটা মাছের তেলকে বয়সের সঙ্গে হাড়ের ক্ষতির একটি মধ্যস্থতাকারী করে তুলেছে।
চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের তেল বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাকুলার অর্থাৎ চোখের স্বাস্থ্য অবক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয় ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা উন্নত করে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের তেল সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা উন্নত করে। এছাড়া মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বিষণ্নতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। বিষণ্নতা চিকিৎসায় এ তেল দারুণ উপকারী।
শিশুদের হাঁপানি রোধ
এছাড়া আরো কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের তেল শিশুদের হাঁপানি রোধ করতে এবং শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্য থাকতে সহায়তা করে। এজন্য আমাদের সপ্তাহে অন্তত দু-তিনদিন মাছ খাওয়া উচিত। বেশির ভাগ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তবে সামুদ্রিক মাছে এ অ্যাসিড বেশি থাকে। আর মাছে শুধু যে এ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তা নয়, ভিটামিন-মিনারেল-প্রোটিনসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। তাই সবার খাবারের তালিকায় মাছ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত।
সূত্র: হেলথ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।