স্বাস্থ্য ডেস্ক : ঘুম থেকে ওঠার পর কেউ যদি দেখে তার ঠোটের কোনায় ঘা! পরক্ষণেই সে মনে করে তার বোধ হয় রাতে জ্বর এসেছিল। মূলত,জ্বর-ঠোসা বা কোল্ড সোর যে জ্বর আসলেই যে হবে এমন কোন কথা নেই।
জ্বর-ঠোসা কেন হয় :
জ্বর-ঠোসা যার ইংরেজিতে নাম, ফিভার বিলিস্টার বা কোল্ড সোর,`হার্পিস সিমপ্লেক্সে ভাইরাস টাইপ-১’ দ্বারা সংঘটিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটি আমাদের শৈশবকালীন সময়েই শরীরে প্রবেশ করে এবং শারীরিক ভাবে প্রকাশ পাবার আগ পর্যন্ত শরীরে ইনঅ্যাক্টিভ থাকে।
মনে রাখতে হবে,`হার্পিস সিমপ্লেক্সে ভাইরাস টাইপ-১’ দ্বারা এক বার আক্রান্ত হলে যে জ্বর-ঠোসা হয় তা কিন্তু সারা জীবনে পুরোপুরি ভাল হয়না। মাঝে মাঝেই এটি ফিরে আসে। বাকি সময় সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
জ্বর-ঠোসা হলে কি করবেন:
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বর-ঠোসা হলে তেমন কোন মেডিসিন খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।তবে,যদি ব্যথা খুব বেশি হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যামিনো এসিড এল-লাইসিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: টক দই, চীজ,মাছ জ্বর – ঠোসার ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয় খাবার যেমন: লেবু,কমলা,পিপার,অ্যাস্পারাগাস,পার্সলি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।চাইলে,ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এল-আর্জিনিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে।
পাশাপাশি,আর্জিনিন সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ বাদাম,বীচি জাতীয় খাবার,জেলো,চকোলেট,এসিডিক ফুড বিয়ার,বীফ এবং চিনি বাদ দেয়া উচিত।
হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস অতি মাত্রায় সংক্রামক। যা খুব সহজে এক জন থেকে অপর জনেরমাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তবে,যার মাঝে সংক্রমিত হয়, ইমিউনিটি ভাল থাকলে অধিকাংশ সময়ে তার দেহে এটি ইনঅ্যাক্টিভ এই জ্বর-ঠোসা, ফিভার বিলিস্টার বা কোল্ড সোর যে নামেই ডাকা হোক না কেন ব্যাপারটি বেশ যন্ত্রনা দায়ক এবং বিব্রতকর। যা,৭-১০ দিনের মধ্যে কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যায়।
জ্বর-ঠোসা বা কোল্ড সোর যদি ৭-১০ দিনের মধ্যে ভাল না হয় অথবা পুনরায় হয় এবং আগের চাইতে বেশি জায়গাতে হয় তবে অবশ্যয় একজন জিপি ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জ্বর-ঠোসায় আক্রান্ত হওয়া অবস্থায় কোন ছোট শিশুকে আদর করে চুমু দেয়া উচিত নয়। কারন,চুমু দেয়ার ফলে শিশুর শরীরে এই হার্পিস সিমপ্লেক্সে ভাইরাস ১ সংক্রমিত হয়।
আক্রান্ত স্থান কোন ভাবেই হাত লাগানো উচিত নয়। তবে,লিপ বাম বা মলম লাগানোর সময় পরিষ্কার হাত দিয়ে আলতো করে লাগানো উচিত। মলম বা লিপ বাম লাগানো শেষ হলে হাত ভাল ভাবে সাবান এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত।
জ্বর-ঠোসা হলে নিজের প্লেট,গ্লাস,চামচ আলাদা ভাবে ব্যবহার করা উচিত।অন্য কারো গ্লাস বা প্লেট ব্যবহার করা উচিত নয়।
কোল্ড সোরে আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত নিজের তোয়ালে,লিপিস্টিক,ছুরি কাঁচি অন্যের সাথে শেয়ার না করা।
ক্ষত স্থানে হাত দেবার পর,খেয়াল রাখতে হবে এই অপরিষ্কার হাত যেন শরীরের অন্য কোথাও না লাগে।বিশেষ করে চোখ এবং জেনিট্যাল এরিয়াতে।
বাইরে যাবার সময় সান ব্লক ব্যবহার করুন। ঠোঁটে নিয়মিত লেমন বাম ব্যবহার করতে পারেন।
অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। বাড়তি চিন্তা পরিহার করুন।
জ্বর-ঠোসায় আক্রান্ত হলে জিংক অক্সাইড বেইসড ক্রিম খুব ভাল কাজ দেয়। এছাড়া,জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ মাশরুম,টার্কি,ডিম,ওয়াইল্ড কট ফিস ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
জ্বর-ঠোসার ক্ষত দ্রুত ভাল করতে নারকেলের তেল বা টি-ট্রি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্যান্য যে কারণে জ্বর-ঠোসা হতে পারে
অন্যান্য যে কারণে কোল্ড সোর হতে পারে সেগুলো হল,শরীরে অন্য কোন ধরণের ইনফেকশন যেমনঃরেসপাইরেটরি ইনফেকশন,অধিক জ্বর,ইমোশনাল আপসেট,সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস,সান লাইট,পিরিয়ড,কোন ইনজুরি বা হরমোনাল ইম্ব্যালান্সের কারণে। সুতরাং,শুধু যে জ্বর হলেই কোল্ড সোর বা জ্বর-ঠোসা হবে এমন নয়।
সুতরাং,সচেতন হোন সাবধান থাকুন।
লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।