শীতের সকাল। গায়ে ভারী পোশাক। কম্বলমুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। এমন সময় বৃষ্টি। বাইরে তাকালেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই তো ভালো লাগে! কিন্তু এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। শীতকালে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। প্রশ্ন হলো, কেন শীতকালে বৃষ্টি হয় না?
এর পেছনে দায়ী প্রকৃতির কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য। মূল কারণ, তাপমাত্রার পরিবর্তন। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কম থাকে। ফলে মেঘের মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প কনডেন্সেশন বা ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় বরফ বা তুষারে পরিণত হয়। ঘনীভবন মানে, যে প্রক্রিয়ায় গ্যাস বা বাষ্প ঘন হয়ে তরলে পরিণত হয়। এ কারণে অনেক দেশে বরফ বা তুষারপাত বেশি দেখা যায়। ফলে বৃষ্টি হয় না। বাংলাদেশে অবশ্য বরফ পড়ে না। কারণ, আমাদের দেশের তাপমাত্রা কখনো ০ ডিগ্রিতে পৌঁছায় না।
শীতকালে বাতাস সাধারণত শুষ্ক ও ঠান্ডা থাকে। মানে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প কম থাকে। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার জন্য মেঘে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বেশি হতে হয়। তখনই কেবল মেঘ ভারী হয়ে ঝরে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়, অর্থাৎ বৃষ্টি হয়। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার জন্য বাতাসে যদি প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প না-ই থাকে, তাহলে মেঘ ভারী হবে কীভাবে? ফলে বৃষ্টিও হয় না। তার ওপর শুষ্ক বাতাস মেঘের মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প শুষে নেয়। অর্থাৎ মেঘের জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব এটি আরও কমিয়ে দেয়। ফলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে যায়।
তাহলে শীতে কুয়াশা বা শিশির পড়ে কেন? আর শীতকালে বাতাস শুষ্কই-বা থাকে কেন? এই প্রশ্ন দুটির উত্তর পেতে বাষ্পীভবন এবং ঘনীভবন সম্পর্কে একটু জানতে হবে। বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় তরল বাষ্পে রূপ নেয়, আর ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ঘটে উল্টোটা। মানে বাষ্প রূপান্তরিত হয় তরলে। বাতাসের তাপমাত্রা স্থির থাকলে পানি বা যেকোনো তরলের বাষ্পীভবন ও ঘনীভবন প্রক্রিয়া একটি ভারসাম্য বজায় রাখে।
যতটি অণু বাষ্পীভূত হয়, ততটিই ঘনীভূত হয়ে আবার তরলে পরিণত হয়। তবে শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এই ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। কারণ ঠান্ডা বাতাসে জলীয় বাষ্পের অণুগুলো ধীরে চলাচল করে। এতে ঘনীভবনের হার বেড়ে যায়। তাই জলীয় বাষ্প বেশি তরলে পরিণত হয়। একই কারণে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়। ফলে শীতকালে বাতাসের জলীয় বাষ্প কমে যায় এবং শিশির বা কুয়াশা তৈরি হয়। মানে শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়।
এ কারণে বৃষ্টি হওয়ার জন্য বাতাসে প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প পাওয়া যায় না। ফলে বৃষ্টিও হয় না। আরেকটি বিষয় হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় একই সময় শীতকাল আসে না। স্বাভাবিক। এখানে একটু বলে নিই, পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে আছে। ফলে সূর্যের আলো সব অঞ্চলে সমানভাবে পড়ে না। বছরের কিছু সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্যের আলো বেশি পড়ে, কিছু সময় দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি পড়ে।
যেখানে সূর্যের আলো বেশি পড়ে, সেখানে গ্রীষ্মকাল থাকে, উল্টোদিকে থাকে শীতকাল। বাংলাদেশ রয়েছে উত্তর গোলার্ধে, আর এখানে এখন শীতকাল। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে এখন গ্রীষ্মকাল। কিন্তু শীত হলে কী হবে, যেসব জায়গা সমুদ্রের কাছাকাছি, সেখানে শীতকালেও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হতে পারে।
কারণ, শীতকালেও রোদ ওঠে। সেই রোদের কারণে কিছু পানি সমুদ্র থেকে বাষ্পীভূত হয়। সেই বাষ্পকে বাতাস যে অঞ্চলে ঠেলে নিয়ে যায়, সেখানকার মেঘে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বাড়তে পারে। এভাবে সমুদ্র তীরবর্তী পানি থেকে জলীয় বাষ্প উড়ে গিয়ে মেঘ তৈরি করে। কিন্তু যেসব জায়গা সমুদ্র থেকে দূরে, শুকনো অঞ্চল, যেমন—বাংলাদেশের উত্তর বা পশ্চিম অঞ্চল, সেখানে শীতে বৃষ্টি প্রায় হয়ই না।
তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? শীতকালের ঠান্ডা বাতাস, কম আর্দ্রতা আর মেঘ তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিবেশের অভাব—এই তিনে মিলে মিলে বৃষ্টির পথ বন্ধ করে দেয়। তবে একেবারে যে বৃষ্টি হয় না, তা নয়। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো জায়গায় শীতকালেও বৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে যদি ঝড়ো আবহাওয়া বা কোনো বড় নিম্নচাপ তৈরি হয়। তবে সাধারণত সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতেই এমনটা হতে দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।