শূন্য (০) আসলে কী? কোনো শব্দ বা বর্ণ? ফুল বা ফল? অণু-পরমাণু? এর কোনোটিই নয়। সে ক্ষেত্রে শূন্যকে সংখ্যা বলাই যায়। কিন্তু কোন ধরনের সংখ্যা? পৃথিবীতে কি এর অস্তিত্ব আছে? বাস্তবে শূন্যের অস্তিত্ব না থাকলে, শূন্য আবিষ্কৃত হলো কেন? এককথায় বললে, গণনার প্রয়োজনে। আসলে শূন্য আবিষ্কারের আগেও ব্যাবিলন, রোম কিংবা মায়া সভ্যতায় নির্দিষ্ট চিহ্ন ব্যবহৃত হতো গণনার জন্য।
তবে এতে অনেক বড় সংখ্যা লিখতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হতো। প্রাচীন ভারতীয়রা সে জন্য শূন্যের ব্যবহার শুরু করেন। অর্থাৎ বাস্তবে শূন্যের প্রয়োগ বা ব্যবহার না থাকলেও সংখ্যা পদ্ধতির জন্য এর ভূমিকা অপরিসীম।
কে শূন্য আবিষ্কার করেছেন, তা নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে। কারো মতে শূন্যের উদ্ভাবক ব্রহ্মগুপ্ত, আবার কেউ কেউ বলেন আর্যভট্ট। তবে শূন্য যেই আবিষ্কার করুন না কেন, তিনি ভারতীয়ই ছিলেন। কাহিনিটা অনেক বড়, তাই সেটা অন্য কোনো লেখার জন্য তোলা থাকুক। প্রসঙ্গে ফিরি।
ধরুন, আপনার কাছে তিনটি কমলা আছে। সেখান থেকে একটি সরিয়ে ফেললাম। এখন আপনার কাছে কয়টি কমলা আছে? আপনি বলবেন, দুটি। আপনার উত্তর হ্যাঁ-বোধক। এবারে আমি আরও একটি কমলা সরিয়ে ফেললাম। এখন কয়টি আছে? আপনি বলবেন, একটি। এখনও আপনার উত্তর হ্যাঁ-বোধক। এরপর যদি আমি আরও একটি সরিয়ে ফেলি? এবার কী বলবেন? কয়টি কমলা আছে? বলবেন একটিও নেই। অর্থাৎ, আপনার উত্তর এখন আর হ্যাঁ-বোধক নয়। উত্তরে না-বোধক শব্দ চলে এসেছে।
যুক্তির খাতিরে হয়তো বলতে পারেন, আমার কাছে শূন্যটি কমলা আছে। কিন্তু এভাবে আমরা কখনো বলি না। কারণ শূন্য মানে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তাহলে শূন্যকে কোন ধরনের সংখ্যা বলবেন? ধনাত্মক, নাকি ঋণাত্মক?
ধরুন, শূন্য (০) ধনাত্মক সংখ্যা। এখন চিন্তা করুন, আপনার কাছে পাঁচটি মুরগি আছে। কীভাবে গুনবেন? ১, ২, ৩, ৪ ও ৫। কেউ নিশ্চয়ই ০, ১, ২, ৩, ৪ ও ৫—এভাবে গুনবে না। তাহলে শূন্যকে কীভাবে ধনাত্মক সংখ্যা বলি?
যেহেতু শূন্য ধনাত্মক সংখ্যা নয়, সেহেতু নিশ্চয়ই ঋণাত্মক সংখ্যা। কারণ পূর্ণসংখ্যাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা ও ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা। একটা না হলে অন্যটা হওয়ার কথা। এই যুক্তিতে বলতে পারি, শূন্য ঋণাত্মক সংখ্যা। কিন্তু সেটাও আসলে সম্ভব নয়। কারণ বাস্তবে ঋণাত্মক সংখ্যার কোনো অস্তিত্ব নেই। নিশ্চয়ই বলবেন না, আমার কাছে মাইনাস ৫টি মুরগি আছে। এটা থাকা তো সম্ভব নয়। কারণ বাস্তব জগতে ঋণাত্মক সংখ্যারও কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই শূন্য ধনাত্মক যেমন নয়, তেমনি ঋণাত্মক সংখ্যাও নয়। তাহলে?
শূন্যকে যদি কোনো সংখ্যাই না ধরি? শূন্য যদি বাদ দিয়ে দিই গাণিতিক হিসাব-নিকাশ থেকে? সেটাও সম্ভব নয়। শূন্য আসলে একটা জায়গা দখল করে থাকে। শূন্যের বাঁয়ে সব ঋণাত্মক সংখ্যা এবং ডানে ধনাত্মক সংখ্যা। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যাকে আলাদা করে রেখেছে শূন্য। আবার শূন্য মানে কিছু নেই। তাহলে শূন্য আসলে কোন ধরনের সংখ্যা? স্বাভাবিক সংখ্যা হতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। স্বাভাবিক সংখ্যার সংজ্ঞা দুটি। প্রথমত, ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যাকে স্বাভাবিক সংখ্যা বলে। প্রশ্ন আসে, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা কী? শূন্যের চেয়ে বড় পূর্ণসংখ্যাকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। যেমন ১, ২, ৩… ইত্যাদি। এখানে কিন্তু শূন্যের জায়গা নেই। কারণ শূন্যের চেয়ে বড় সংখ্যা হতে হবে। দ্বিতীয়ত, অঋণাত্মক সংখ্যাকেও স্বাভাবিক সংখ্যা বলে। যেমন, ০, ১, ২, ৩…ইত্যাদি। অঋণাত্মক মানে যে সংখ্যা ঋণাত্মক নয়, সেটা। তাহলে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় সংজ্ঞানুসারে শূন্যকে স্বাভাবিক পূর্ণসংখ্যা বলা যায়।
কিন্তু একটু ভাবুন, আপনি ৫টি টি-শার্ট কিনবেন। কীভাবে গুনবেন? ০টা, ১টা, ২টা…—এভাবে নিশ্চয়ই গুনবেন না। ১, ২, ৩…এভাবে গুনবেন। খাতাকলমে শূন্যকে তাই স্বাভাবিক পূর্ণাসংখ্যা বলা গেলেও বাস্তব জীবনে এর ব্যবহার নেই। তাহলে শূন্য কি কোনো সংখ্যা নয়? হ্যাঁ, শূন্য নিজেই একটি সংখ্যা, বিশেষ সংখ্যা বলতে পারেন। যার নাম শূন্য। মানে, বাস্তব সংখ্যাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ধণাত্মক সংখ্যা, ঋণাত্মক সংখ্যা ও শূন্য। অর্থাৎ, শূন্য নিজেই একটি সংখ্যা, নিরপেক্ষ সংখ্যা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।