জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) চিঠিটি পাঠানো হলেও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রোববার (২৩ নভেম্বর)। তার তথ্য মোতাবেক, চিঠি পাঠানোর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও জবাব আসেনি ভারতের পক্ষ থেকে।

এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন; যেখানে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে নয়াদিল্লির ভাবনা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এক দশকের বেশি সময় ধরে ছিলেন ভারতের সবচেয়ে অটল আঞ্চলিক মিত্রদের একজন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় থাকাকালে তার সরকার ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমনে অন্যতম প্রধান সহায়ক ছিল, যারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগে দুই দেশের বিস্তৃত সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য একাধিকবার শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেছিলেন। কিন্তু, এখন তার সরকারের পতন হওয়ায় নয়াদিল্লিতে বড় ধরনের এক নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারত আশঙ্কা করছে, উগ্রবাদী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে শেখ হাসিনার সরকারের অনুপস্থিতিতে।
বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন এমন একজন ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়েত। তিনি বলেন, নয়াদিল্লি শেখ হাসিনাকে কারাজীবন বা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে, সে বিষয়ে তার (অনিলের) যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বাংলাদেশের সাবেক এই নেত্রী এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটি ভারতকে এমন একটি সম্ভাব্য ভিত্তি তৈরি করার সুযোগ দিচ্ছে, যাতে তার বলতে পারে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভারতের প্রত্যর্পণ আইন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির প্রত্যর্পণ চুক্তি, যার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার বিচারের জন্য তাকে ফেরত পাওয়ার আশা করছে, সেখানেও ‘রাজনৈতিক অপরাধের’ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যই মূলত যুক্ত করা হয়েছে। এটি কোনো একটি দেশকে কারও অপরাধের ধরন রাজনৈতিক হলে তাকে প্রত্যর্পণের আবেদন প্রত্যাখ্যানের সুযোগ দিয়েছে।
অনিল ত্রিগুণায়েত বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের চিঠি প্রত্যাখ্যানের জন্য ভারতকে শেখ হাসিনার বিচারে উল্লেখিত অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বদলে কেবল রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
অবশ্য অনিল ত্রিগুণায়েত এও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা এখনও সব আইনি প্রতিকার শেষ করেননি। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারেন। এছাড়া, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে তার।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, ‘যেহেতু সব প্রতিকার শেষ হয়নি, তাই শেখ হাসিনাকে পাঠানোর ব্যাপারে কোনোরকম তাড়াহুড়া করবে না ভারত।’
যেদিন শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়, ওই দিনই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বিলম্ব না করে’ তাকে হস্তান্তর করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী এটি ভারতের দায়িত্ব।’
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের জন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ এবং দলটির নেতৃত্ব ছত্রভঙ্গ হওয়ায় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীরভাবে দ্বিধাবিভক্ত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জাতিকে বের করে আনার এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি এবং অন্য ডজনখানেক ছোট দলের জন্য ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ খুলে দিয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এতে দীর্ঘদিনের গভীর বিভেদ সহজে সমাধান নাও হতে পারে।
সূত্র: আরটিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



