: রবিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারের কক্ষ ১০১১ নম্বর রুমে গিয়ে দেখি সে সেখানে নেই। পরে জানতে পারি রাত সোয়া আটটার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা।
কথাগুলো বলছিলেন নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন। আতংকিত এই ছাত্রটি নিজের নাম পরিচয় প্রকাশে একেবারেই রাজি নন। এটা ক্যাম্পাসের নৈমিত্তিক ঘটনা। তাই এ ব্যাপারে ততটা গুরুত্ব দেইনি, বলছিলেন তিনি।
কিন্তু রাত ৩ টার দিকে তিনি জানতে পারেন আবরার কে হ’ত্যা করে একতলা এবং দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি এসময় নানা জনের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, আবরারকে দুই-দফা দুটি রুমে নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়েছে। প্রথমে ২০১১ নম্বর রুমে, পরে ২০০৫ নম্বর রুমে। বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
“সেই সময় আমি ঘটনা স্থলে যাই। দেখি বুয়েট মেডিকেলের ডাক্তার এসেছেন এবং আবরারকে দেখে মৃ’ত বলে ঘোষণা করছেন”। সিঁড়ির কাছের জায়গাটি ঘিরে রেখেছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। সাধারণ ছাত্রদের সেখানে জড়ো হতে বাধা দিচ্ছিলো তারা।
“আমরা তখন হলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভোষ্ট কে বলি, স্যার আপনার সাথে কথা আছে। স্যার কে নিয়ে ১০১১ রুমে আসি এবং দরজা বন্ধ করে স্যার কে বলি, স্যার এখানে কিছু হচ্ছে, যেটা স্বাভাবিক না। স্যার আমাদের তখন বলেন, তোমরা নিজেরা একত্রিত হও”।
“এর মধ্যে ছাত্রলীগের ছেলেরা খবর পেয়ে আমাদের দরজা বাইরে থেকে ধাক্কা দিতে থাকে। তারা ভোর ৫টা পর্যন্ত সেখানেই ছিল। তারপর তারা চলে গেলে আমরা ফেসবুকে আমাদের বুয়েটের সব হলের ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করি এবং একত্রিত হতে থাকি”।
“ততক্ষণে ৬টা বেজে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ের পরিচালক মিজানুর রহমান এলে তাকে আমরা একটা কথাই বলি যে, এই ঘটনার তদন্ত চাই। কিন্তু তিনি আমাদের হতাশ করেন”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রের বয়ান : ২০০৫ নম্বর রুমে আবরার কে আমি দেখি। তখন সে বেঁচে ছিল। তখন পুলিশ চলে এসেছে। আমরা পুলিশের কাছে যাই, পুলিশ বলে ওকে (আবরারকে) নিচে নামানোর ব্যবস্থা করা হোক, যেন হাসপাতাল বা থানায় নেয়া হয়। এটা পুলিশের ভাষ্য। আমি কয়েকজন জুনিয়রকে নিয়ে আবরারকে কোলে করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম।
সময়টা রাত ২ থেকে ৩ টার মধ্যে। সে তখন জীবিত ছিল এবং আমাদের বলছিল, ‘আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাও’। বিশেষ করে বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সে। এম্বুলেন্স আসতে দেরি হচ্ছিল। পুলিশ ছিল। যেকোন কারণেই হোক আমার আর সেখানে থাকা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ যা বলছে : চকবাজার থানার ওসি সোহরাব হোসেন ঐ রাতের ঘটনা সম্পর্কে বলছিলেন, “আমরা প্রথম সংবাদ পাই আমাদের ঐ এলাকায় যে মোবাইল পেট্রোল পার্টি আছে তাদের কাছে। তারা থানায় ফোন করে জানায়, বুয়েটে গণ্ডগোল হচ্ছে। তখন পুলিশের এই দলটি বুয়েটে যায়”।
“রাত সোয়া দুইটার দিকে পুলিশের একটা দল যায় হলে। কিন্তু তাদের কে ভিতরে ঢুকতে দেয় নি। ছাত্রলীগের কিছু ছেলে এসে বলে এখন ঢুকতে পারবেন না, কারণ আমাদের হল কর্তৃপক্ষ এখন কেউ আসেনি”।
তিনি বলছিলেন, পুলিশের এই দলটি ৩টা পর্যন্ত সেখানে ছিল তারপর সেখান থেকে চলে আসে। এরপর বুয়েট ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি রাসেল (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আবার থানায় ফোন করে এবং জানায় এখন তাদের হলের প্রভোষ্ট এসেছে। এখন আপনারা আসতে পারেন।
মি. হোসেন বলছিলেন, ৪ টার দিকে আবারো পুলিশ সেখানে যায়। প্রভোষ্ট, ডাক্তার সেখানে সবাই উপস্থিত ছিল। ডাক্তার সেখানে আবরারকে মৃ’ত ঘোষণা করে। এরপর সেখানকার প্রক্রিয়া শেষ করে ম’রদেহ ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
তিনি আরো জানান, আবরারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে আবরারের মৃ’তদেহে অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। সোমবারই পুলিশ বলেছিল, আবরারকে পি’টিয়ে হ’ত্যা করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমে খবরে, পুলিশের দুই দফা সেখানে যাওয়া এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মি. হোসেন বলছিলেন, আমরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছি। কিন্তু অনুমতি ছাড়া আমরা হলের মধ্যে ঢুকতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের দায়িত্বের কোন গাফিলতি দেখতে পাচ্ছি না। আবরার হ’ত্যায় এ পর্যন্ত ১৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের সবাইকেই রিমান্ডে নেয়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সূত্র ও ভিডিও : বিবিসি বাংলার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।