জুমবাংলা ডেস্ক: ঝালকাঠিতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ২৭ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় বরগুনার পোটকাখালী গ্রামে খাকদোন নদীর তীরবর্তী গণকবরে এসব মরদেহ দাফন করা হয়। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গণকবর তৈরি করে শনাক্তহীন ২৭ লাশের শেষ গোসল ছাড়াই দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে চার মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যায় স্বজনরা। শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি থেকে বরগুনা সদর হাসপাতালে এসে পৌছায় ৩৩টি মরদেহ। এরপর রাতেই একটি মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যায় স্বজনরা।
শনিবার সকালে আরও তিনজনকে শনাক্ত করেন স্বজনরা। পরে ২৯ জনের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার পরে আরও ২ জনকে শনাক্ত করে স্বজনরা। বাকি ২৭ মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে আসা হয়।
এরপর আজ দুপুর ১টার দিকে বরগুনার পোটকাখালী গ্রামের খাকদোন নদীতীরবর্তী এলাকায় বেওয়ারিশ লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আহত ৮১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা চলছে। ১৬ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত ৪১ জনের ৩৭ জনই বরগুনার বাসিন্দা।
প্রতিটি লাশের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বরগুনা সদর থানায়। এর মধ্যে সদরের ৯ নং এম বালিয়াতলীর বশির আহমেদ স্বপনের স্ত্রী জাহানারা (৪৫), ২নং গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের দুই মেয়ে লামিয়া আক্তার (৪) ও সামিয়া আক্তার (৪)। তবে রফিকুলের স্ত্রী শিমু আক্তার নিখোঁজ রয়েছেন। পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামের মোস্তফার মেয়ে সাহিদা (১৫), একই উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রামের নাসরুল্লাহর মেয়ে তাবাসসুম (৩) ও ৮ নং বরগুনা সদর ইউনিয়নের ঢালুয়া গ্রামের বেল্লালের স্ত্রী মনোরা (৫০)।
বাকি ২৫টি কফিনে ২৭টি লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। যার মধ্যে ২টি কফিনে মায়ের সাথে সন্তানকে কবরস্থ করা হয়।
তবে ৩৩টি লাশ ছাড়াও ঝালকাঠি থেকে স্বজনরা চারটি ও বরগুনা থেকে রাতে তিনটি লাশ শনাক্ত করে ইতোমধ্যে নিয়ে এসেছেন। এরা বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটার বাসিন্দা। অগ্নিদগ্ধে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার সকালে ৩০টি লাশের বেলা ১১টায় সার্কিট হাউজ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে ১টি ও আগে ২টি লাশ নিয়েছেন স্বজনরা। পরে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পোটকাখালী গণকবর তৈরি করে শনাক্তহীন ২৭ লাশের শেষ গোসল ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানাজা শেষে পোটকাখালী জাতীয় কবরস্থানে তিন সারিতে বিশেষ মর্যাদায় এদের দাফন করা হয়। সার্কিট হাউজ থেকে পোটকাখালী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো বরগুনার মানুষ সমবেদনা জানান।
এই প্রথমবারের মতো গণ জানাজার ইমামতি করেন বরগুনা কালেক্টর (ডিসি কোর্ট) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মুফতি জাহিদুল ইসলাম।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যার মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭১৬৭০০১৭০)। শনাক্ত ব্যতীত যে লাশগুলো দাফন করা হয়েছে, প্রতিটি লাশের ডিএনএ রাখা হয়। পরবর্তীতে যোগাযোগকৃত আত্মীয়-স্বজনের ডিএনএ’র সাথে মৃত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশের কবর চিহ্নিত করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: গুরুতর আহত ২ জনকে হেলিকপ্টারে নেওয়া হলো ঢাকায়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।