জুমবাংলা ডেস্ক : সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সেনা কর্মকর্তা তানজিমের সঙ্গে কথা হয় বোন তাসনুভা ছারোয়ার সূচির। ওই সময় তানজিম তার বোনকে বলেছিলেন ‘সামনে মিশনে যাব। তোমার কী লাগবে আপু?’ এরপর বলেন, ‘আপু, একটা অপারেশনের যাচ্ছি। অনেক অস্ত্র নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার জন্য দোয়া কোরো, আমাকে মাফ করে দিও।’
আহাজারি করতে করতে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি।
তাসনুভা ছারোয়ার সূচি আরো বলেন, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে নির্জন আমাকে কল দিয়ে বললো আপু অক্টোবরের ১ তারিখে আমার জন্মদিন, সেদিন আমি ছুটিতে আসবো তখন আমাকে কি উপহার দিবা? আমি জানতাম যে নির্জন অনেক পশুপাখি পছন্দ করতেন। তাই আমি নির্জনকে বলেছিলাম, জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করবো। নির্জন আমার একমাত্র ভাই ছিলো।
জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাতে গেলে সশস্ত্র ডাকাতদল ও সন্ত্রাসীদের গুলি-ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন তানজিম ছারোয়ার নির্জন। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন ডাকাত-সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া।
পুলিশ জানায়, এ সময় ডাকাতরা ওই সেনা কর্মকর্তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলি করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এই অবস্থায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে রামু এলাকায় মারা যান। সেনা কর্মকর্তা তানজিমের বাড়িতে চলছে মাতম। পরিবার, স্বজন এবং এলাকাবাসীর কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তানজিম। পড়াশোনা করেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে। এরপর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ক্যাপ্টেন হওয়ার কথা ছিল তার।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডুলাহাজারার পূর্ব মাইজপাড়ার ওই বাড়িতে ডাকাত হানা দিয়েছে এমন খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর একটি দল অভিযানে যায়। এ সময় আভিযানিক দলে থাকা লেফটেন্যান্ট তানজিম সশস্ত্র এক ডাকাতকে জাপটে ধরেন। তখনই ডাকাতের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। এমনকি অপরাপর ডাকাতরা উপর্যুপরি গুলি করতে থাকে যৌথ বাহিনীর টিমকে লক্ষ্য করে। সেখান থেকে একটি গুলি সেনা কর্মকর্তার শরীরে বিদ্ধ হয়।
স্থানীয়রা জানান, চকরিয়ার ডুলাহাজারার আলোচিত রিভার্জপাড়া, কাটাখালী, ডুমখালী এলাকাটি হচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমি। কয়েক বছর ধরে সেই এলাকাটি ডাকাত-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য এবং নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে ওঠে। সেখান থেকে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এসব অপরাধীদের তৎপরতা দমাতে আগে তেমন অভিযান চালাতে পারেনি। কারণ সংঘবদ্ধ এসব ডাকাত-সন্ত্রাসীদলের সদস্য সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এমনকি তাদের হেফাজতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আসরের নামাজের পর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করের বেতকা এলাকার বোয়ালী মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে, বিকেল সাড়ে ৩টায় এ সেনা কর্মকর্তার মরদেহ বহনকারী সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার জেলা সদর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নির্জনের মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ বাড়িতে।
সেখানে পৌঁছার পর নিহতের বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা-মা। ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় একমাত্র বোন। যারা নির্জনকে এভাবে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন সবাই। পরে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় অংশ নেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ। পরে নিহত সেনা কর্মকর্তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর দাফন সম্পন্ন করা হয়।-ডেইলি-বাংলাদেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।