জুমবাংলা ডেস্ক : মতিয়া চৌধুরী ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ছয় বার। তিন দফায় মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। অংশগ্রহণ করেন সম্মুখযুদ্ধেও।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার কথা থাকলেও তার কোনও জানাযাতেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়ার কোনও আয়োজন ছিল না। ছিলেন না প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তিও।
মতিয়া চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য, কিন্তু তার ব্যক্তিজীবন একেবারেই সাদামাটা। আটপৌরে সুতি শাড়ির আড়ালে বাস করা বাংলাদেশের রাজনীতির ‘অগ্নিকন্যা’ মতিয়া চৌধুরীর শেষবিদায়টাও হলো ঠিক তার রোজকার জীবনের মতোই সাদামাটা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মতিয়া চৌধুরী শায়িত হন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামী সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাযা হয় তার। তবে সেখানে দেখা যায়নি দলের শীর্ষ কোনও নেতাকে। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে অপ্রকাশ্যে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগ। আবার অনেকের মাথার ওপরর ঝুলছে মামলার খড়্গ।
তবে আজাদ মসজিদে বনানী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় মতিয়া চৌধুরীকে। এই সংগঠনের নেতাকর্মীরাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ফুল দেয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিবার, দৈনিক সংবাদ পরিবার, বিশেষ গেরিলা বাহিনী, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জানাযা শেষে মতিয়ার চৌধুরীর লাশবাহী গাড়ি আজাদ মসজিদ ছেড়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তাকে বিদায় জানান।
সকালে রমনায় তার বাসায় প্রথম জানাযাতেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেসসময় তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান রাজনৈতিক সহকর্মী, অনুসারী ও স্বজনরা। সেখানে হয় প্রথম জানাযা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সলাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মতিয়া চৌধুরীর গার্ড অব অনারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। জানাজাসহ যাবাতীয় কার্যক্রম শেষ করে আমাদের এখানে শুধু দাফন করা হয়েছে। সাধারণত যেখানে জানাজা পড়ানো হয় সেখানেই গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।’
গুলশানে জানাযা হলেও এই থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ বলছেন, মতিয়া চৌধুরিকে গার্ড অব অনার দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
শেষ বিদায়ের সময় মতিয়া চৌধুরীর বোন মাহমুদা চৌধুরী বলেন, ‘তার সারাজীবন ত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কেটেছে, তিনি মানুষের জন্য করে গেছেন।’
তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি ইতিহাসের পরিসমাপ্তি হলো বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এসেছিলেন সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলও।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
মতিয়া চৌধুরীর অধ্যায়ের এমন সময় পরিসমাপ্তি ঘটল যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে দলটিকে, দেশ ছাড়তে হয়েছে দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে।
কবরের জন্য আলাদা জায়গা পেলেন না মতিয়া চৌধুরী, স্বামীর কবরে দাফন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।