জুমবাংলা ডেস্ক : সুপ্রাচীন শহর বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা। বগুড়া পৌরসভার একদিন আগে ১৮৭৬ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। এখানে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন খেরুয়া মসজিদের সুনিপুণ নির্মাণ শৈলী এখনও মানুষের মন কাড়ে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শেরপুর শহরের অদূরে মাত্র ১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় সাড়ে ৪৩৬ বছরের প্রাচীণ খন্দকারটোলায় খেরুয়া মসজিদের অবস্থান। মুঘল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদ।
জানা যায়, জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্ঠপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ৯৮৯ হিজরীর ২৬ জিলকদ (১৫৮২ খ্রিঃ) সোমবার মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ‘কাকশাল’ উপাধি ছিল তুর্কিদের দেওয়া। ঘোড়াঘাট অঞ্চল ছিল তুর্কি জায়গিরদারদের অধীন। মির্জা মুরাদ খান কাকশালের বিশদ পরিচয় পাওয়া যায় না। শেরপুর সে সময় ঘোড়াঘাটের অধীনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ঐতিহাসিকদের অনুমান মির্জা মুরাদ খান কাকশাল শেরপুরের জায়গিরদার বা ফৌজদার ছিলেন।
মসজিদটি দাড়িয়ে আছে চার কোণের প্রকান্ড আকারের মিনার আর চওড়াা দেয়ালের কারণে। ইটে খোদাই করা নকশা ক্ষয়ে গেছে এবং চুন-সুরকির প্রলেপ ঝরে গেছে। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা পাতলা লাল ইটের দেয়ালগুলো প্রায় সাড়ে ৪ ফুট চওড়া। তার ওপর ভর করেই ছাদের ওপর টিকে আছে খেরুয়াা মসজিদের তিনটি গম্বুজ। খেরুয়া মসজিদ বাইরের দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা মসজিদের বাইরের মাপ দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ২৪ ফুট। আর ভিতরের মাপ দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও প্রস্থে সাড়ে ১২ ফুট। চারদিকের দেয়ালগুলো প্রায় ৬ ফুট পুরো। মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার ও পূর্ব দেয়ালে ৩টি দরজা রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মাঝের দরজাটি অন্য দুটি থেকে আকারে অনেক বড়। আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অধ্যগোলাকার মেহরাবগুলো স্থাপিত। মসজিদের কার্নিস বাকানো আছে। দেয়ালে কিছু কিছু পোড়া মাটির চিত্র ফলকও ছিল তবে সংখ্যায় খুবই কম, দেওয়ালগুলো সাদাসিধে ধরনের বলা যেতে পারে। বাগেরহাটের ৬০ গম্বুজ মসজিদ ও শাহজাদপুরে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের নির্মাণ শৈলীর সাথে এই খেরুয়া মসজিদের অনেক মিল দেখা যায়। ইট ও চুন সুড়কি ছাড়া খেরুয়া মসজিদের নির্মাণ কাজে বৃহদাকার কৃষ্ণপাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের গায়ে দুইটি শিলালিপি ছিল, যার একটির ভিতরে রক্ষিত ছিল যা এখন বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে রয়েছে।
সম্রাট আকবরের আমলে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এর গায়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যতিক্রম অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে। স্থাপত্য বিশারদদের মতে খেরুয়া মসজিদে সুলতানী ও মুঘল আমলের মধ্যবর্তী স্থাপত্য নির্দশন প্রকাশ পেয়েছে। এতে বার কোণা ও আট কোণা কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাংলার স্থাপত্য শিল্পে বিরল। এই মসজিদটি বহুদিন অনাদরে পড়ে ছিল। এর মধ্যে অনেক গাছ পালা জন্মে চারদিকে জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ৯০ এর দশকে প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদফতর এই মসজিদটি সংস্কার করার ফলে মসজিদের আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায় করা হয়। প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদফতর ১৯৮৮ সাল থেকে মসজিদের ৪৮ শতক জায়গাসহ দেখাশোনার জন্য একজন খাদেম নিয়োগ করেছেন। দেশ বিদেশের বহু দর্শনার্থী ও স্থাপত্য বিশারদ এই মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।
বর্তমানে মসজিদের সীমানা প্রাচীর ও রংয়ের কাজ করে সৌন্দর্য বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া মসজিদের অনুকেুলে ইতিহাস লেখা সংবলিত ফলকের সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।