শরতের ঝকঝকে আকাশ। মেঘের ছিটেফোঁটা নেই। কী দিন কী রাত—বৃষ্টির দেখা মেলে কালেভদ্রে। এমন দিনে আপনি যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠেন তাহলে দেখবেন ঘাসের ডগায়, ফুলের ওপর, পাতার ওপর বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমে আছে। এই পানির কণাকে আমরা বলি শিশির। প্রশ্ন হলো, এই শিশির কণা আসে কোত্থেকে? ভেবে দেখেছেন কখনো?
শিশির তৈরি হয় ঘনীভবন প্রক্রিয়ায়। বাষ্প বা গ্যাসীয় পদার্থ থেকে তরলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার নামই ঘনীভবন। সহজ বাংলায় ঘনীভবন মানে ধীরে ধীরে বেশি ঘনত্বের পদার্থে রূপান্তরিত হওয়া। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঠান্ডা বা ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।
কিন্তু বায়ুমণ্ডল ঠান্ডা হয় কীভাবে? পৃথিবীর তাপের প্রধান উৎস সূর্য। দিনের বেলায় সূর্যের তাপে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়। ফলে পানি বাষ্প হয়ে মিশে যায় বাতাসে। দিনের শেষে রাত নামলে ভূপৃষ্ঠ তথা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে বিভিন্ন বস্তুও শীতল হয়। বস্তু যত শীতল হবে, চারপাশের বাতাস তত ঠান্ডা হবে। ঠান্ডা বাতাস গরম বাতাসের মতো বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারে না। ফলে বস্তুর চারপাশের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হতে বাধ্য হয়। তৈরি হয় ছোট ছোট পানির কণা, শিশির। একই ঘটনা আমরা দেখি ফ্রিজ থেকে বের করা ঠান্ডা পানির বোতলে। সেখানেও বিন্দু বিন্দু পানি জমে। এগুলো কিন্তু বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয়। অর্থাৎ এটাও এক ধরনের শিশির।
যে তাপমাত্রায় বাতাসের জলীয় বাষ্প পানির কণায় পরিণত হয়, তাকে বলে ডিউ পয়েন্ট বা শিশির বিন্দু তাপমাত্রা। ভূপৃষ্ঠের অবস্থান, আবহাওয়া এবং দিনের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে ডিউ পয়েন্ট ভিন্ন হতে পারে।
শুষ্ক অঞ্চলের চেয়ে আর্দ্র অঞ্চল, যেমন ক্রান্তীয় কিংবা উপকূলীয় এলাকায় তুলনামূলক বেশি শিশির তৈরি হয়। আর্দ্রতা আর কিছুই নয়। বাতাসে কী পরিমাণ পানি বা জলীয় বাষ্প আছে সেই পরিমাণটা হচ্ছে আর্দ্রতা। বর্তমানে স্মার্টফোনে আবহাওয়া দেখার অ্যাপে খুব সহজেই আর্দ্রতার পরিমাণ দেখা যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাসে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে। রাতের ঠান্ডা পরিবেশে এরা শিশিরে পরিণত হয়।
আবহাওয়ার অবস্থা একটা অঞ্চলের ডিউ পয়েন্ট নির্ধারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ বা ঝড় বাতাসের নানা স্তরের মধ্যে মিশ্রণ ঘটায়। নানা স্তরের বাতাসে থাকে আর্দ্রতার পার্থক্য। এসব বাতাস মিশে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে ওই এলাকার বায়ুমণ্ডল থেকে শিশির তৈরি হওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
আবার অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়াও শিশির তৈরিতে বাঁধা দেয়। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে ওই অঞ্চলে বায়ুমণ্ডল বরফ বিন্দুতে পৌঁছায়। ফলে সেখানে জলীয়বাষ্প আর ঘনীভূত হয়ে পানির কণায় পরিণত হয় না। সাবলিমেটস, অর্থাৎ সরাসরি বাষ্প থেকে কঠিন বরফে পরিণত হয়।
রাতের বেলায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে যখন চারপাশ ঠান্ডা হয়ে আসে সাধারণত তখন শিশির তৈরি হয়। তবে তাপমাত্রা ডিউ পয়েন্টে পৌঁছালে যে কোনো সময়ই শিশির তৈরি হতে পারে। বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতার পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে ডিউ পয়েন্ট তাপমাত্রাও পরিবর্তিত হয়। তাই এর কোনো নির্দিষ্ট মান নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।