জুমবাংলা ডেস্ক : সঞ্চয়পত্র একটি সরকারি সঞ্চয় স্কিম যা বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। নির্ধারিত মুনাফা, ঝামেলামুক্ত প্রক্রিয়া ও নির্দিষ্ট মেয়াদে সুদপ্রাপ্তির কারণে সঞ্চয়পত্র বর্তমানে অধিক জনপ্রিয়। বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই স্কিমের মাধ্যমে ব্যক্তি তার ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে লাভজনকভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
Table of Contents
কারা কিনতে পারবেন
সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন বাংলাদেশি নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং নির্দিষ্ট শর্তে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও নির্ধারিত নিয়মে এটি কিনতে পারেন। পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র নারীদের জন্য বরাদ্দ।
যেসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখবেন
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হচ্ছে: জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ব্যাংক হিসাব নম্বর, টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি থাকে), এবং অর্থের উৎসের প্রমাণ (যেমন আয়কর বিবরণী বা বেতন স্লিপ)। বিনিয়োগের আগে এসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা আবশ্যক।
কত টাকা পর্যন্ত কেনা যাবে
সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। পরিবার সঞ্চয়পত্রে নারীরা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়।
অগ্রিম পরিকল্পনা করুন
সঞ্চয়পত্র দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক টাকা তুলতে না পারায় মুনাফা কমে যেতে পারে। তাই এই স্কিমে বিনিয়োগের আগে ভবিষ্যৎ প্রয়োজন বিবেচনায় কিছু নগদ অর্থ হাতে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
অনলাইন নিবন্ধন করুন
২০২১ সাল থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য অনলাইন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ডিজিটাল ন্যাশনাল সেভিংস সার্ভিস (DNSS) সিস্টেমে নিবন্ধন ছাড়া কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না।
প্রতারণা এড়াতে যা করবেন
সঞ্চয়পত্র কেনার সময় ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থাকা জরুরি, যাতে মুনাফার অর্থ সরাসরি জমা হয়। দালালের মাধ্যমে বা ব্যক্তিপর্যায়ে কেনাবেচা করা যাবে না। শুধুমাত্র ডাকঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক বা নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেই কেনা যাবে।
কাদের জন্য সঞ্চয়পত্র নয়
যারা অল্প সময়ের মধ্যে টাকা তুলতে চান, তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র উপযুক্ত নয়। সাধারণত মেয়াদ হয় ৩ থেকে ৫ বছর। নির্ধারিত সময়ের আগেই সঞ্চয়পত্র ভাঙালে মুনাফার পরিমাণ কমে যায়।
সাড়ে সাত লাখের কম সঞ্চয়পত্র কেনায় মুনাফা বেশি
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ থেকে ১২.৫ শতাংশ। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদের হার ধাপে ধাপে কমে। মুনাফার ওপর ১০% হারে উৎসে কর কাটা হয়, টিআইএন না থাকলে তা ১৫%। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো উৎসে কর কাটা হয় না।
মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে মুনাফা
বর্তমান মূল্যস্ফীতির হারের কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া মুনাফা বাস্তব লাভ কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সঞ্চয়পত্রে স্থির হারে মুনাফা পাওয়া গেলেও তা প্রকৃত অর্থে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। তাই বিনিয়োগের আগে মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
সঞ্চয়পত্র একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত মুনাফা নিশ্চিতকারী বিনিয়োগ পদ্ধতি। তবে বিনিয়োগের আগে নিজের প্রয়োজন, সময়সীমা, আয়কর বিষয়ক কাগজপত্র এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা উচিত। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে এবং নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়পত্র কিনলে এটি হতে পারে আপনার সঞ্চয়ের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
জেনে রাখুন:
সঞ্চয়পত্র কীভাবে কিনতে হয়?
সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে প্রথমে অনলাইনে ডিএনএসএস প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্ধারিত ব্যাংক বা ডাকঘর থেকে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে কাগজপত্র জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ কত টাকা বিনিয়োগ করা যায়?
সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তি অনুযায়ী সীমা নির্ধারিত আছে। যেমন, পরিবার সঞ্চয়পত্রে নারীরা ৪৫ লাখ, পেনশনার স্কিমে ৫০ লাখ, এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়।
সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কত?
বর্তমানে মুনাফার হার বিনিয়োগ ও মেয়াদ অনুসারে ১১% থেকে ১২.৫% পর্যন্ত। তবে নির্দিষ্ট সীমার বেশি বিনিয়োগ করলে ধাপে ধাপে মুনাফার হার কমে যায়।
সঞ্চয়পত্রের কর কেমন হয়?
সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ওপর ১০% হারে উৎসে কর কাটা হয়। যদি কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) না থাকে, তাহলে এই হার বেড়ে ১৫% হয়। তবে ৫ লাখ টাকার নিচে কর কাটা হয় না।
মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সঞ্চয়পত্র কতটা লাভজনক?
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রকৃত লাভে পরিণত না-ও হতে পারে। তাই বিনিয়োগের আগে বাজারের মূল্যস্ফীতি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া ভালো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।