ধর্ম ডেস্ক: ‘আর ঘোষণা করে দাও, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মিথ্যার তো বিলুপ্ত হওয়ারই কথা।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮১)
তাফসির : আগের আয়াতে মহানবী (সা.)-কে সত্যরূপে গমন ও প্রস্থানের জন্য দোয়া করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তাঁকে সত্যের জয়ধ্বনি শোনানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতে মহানবী (সা.)-কে এই মর্মে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছে যে সত্য জয়লাভ করেছে, আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই কথা। এখানে ঈমানদারদের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া উচিত। কেননা অপশক্তির বাহ্যিক জাঁকজমক দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তার পরাজয় ঘটবেই। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবাঘরের চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। মহানবী (সা.) নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলো আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেন—সত্য এসেছে ও মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৭৮ ও ৪৭২০)
একসময় গোটা পৃথিবীর মানুষ তাওহিদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। পরে তাদের মধ্যে শিরক ও নানা ধরনের প্রতিমা পূজা ঢুকে পড়ে। কোরআন ও হাদিসে প্রতিমা পূজা ত্যাগ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘…তোমরা পরিহার করো মূর্তি পূজার অপবিত্রতা এবং পরিহার করো মিথ্যাকথন।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০)
যুগে যুগে বহু মানুষ মূর্তি ও প্রতিমা পূজার মাধ্যমে বিভ্রান্ত হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে তারা হেদায়েতের পথ থেকে দূরে সরে গেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রব, এগুলো (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে…!’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য মূর্তি ও ভাস্কর্যের বেচাকেনা করা সম্পূর্ণ হারাম। জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় থাকা অবস্থায় এই ঘোষণা দিয়েছেন যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মদ, মূর্তি, শূকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি করা হারাম করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২২৩৬)
আসমানি ধর্মগুলোতে বারবার মূর্তি পূজার প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। এবং মূর্তি পূজা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.)-এর অসুস্থতার সময় তাঁর একজন স্ত্রী একটি গির্জার কথা উল্লেখ করেন। গির্জাটির নাম ছিল মারিয়া। উম্মে সালামা ও উম্মে হাবিবা এর আগে হাবাশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা গির্জাটির কারুকাজ ও তাতে বিদ্যমান প্রতিকৃতির কথা আলোচনা করেন। নবী করিম (সা.) শয্যা থেকে মাথা তুলে বলেন, ওই জাতির কোনো পুণ্যবান লোক যখন মারা যেত, তখন তারা তার কবরের ওপর ইবাদতখানা নির্মাণ করত এবং তাতে প্রতিকৃতি স্থাপন করত। এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৪১)
মহানবী (সা.) মক্কার মূর্তি পূজারি সমাজে আগমন করেছেন। এই মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলার দরুন তাঁকে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে। অবশেষে তিনি বীরের বেশে মক্কায় ফিরে এসেছেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি যখন কাবাগৃহে বিভিন্ন প্রতিকৃতি দেখেছেন, তখন তা মুছে ফেলার আদেশ দিয়েছেন। প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করেননি। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৫২)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।