জুমবাংলা ডেস্ক : সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে রেখেই চলে গেল মাসুদ। তাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মেয়ের কাছ থেকে, আমার কাছ থেকে। এখন কী হবে আমাদের, আমার আর মেয়ের দায়িত্ব এখন কে নেবে?
নবজাতক শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে বসে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা।
তিনি জানান, ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের জনক হয়েছেন মাসুদ। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলেন মাসুদা। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ আর দিল না। মেয়ের আকিকার আগেই মাসুদকে কেড়ে নিয়েছে। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাসুদের লাশ নিতে মর্গে এসেছি।
গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বিনোদপুরে হামলার শিকার হয়ে মারা যান মাসুদ। নবজাতক মেয়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে নবজাতক কন্যাসন্তানকে নিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন বিউটি আরা। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
বিউটি আরা বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকায় সংসাসের কাজকর্মও ঠিকভাবে করতে পারতাম না। মাসুদ মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে এলো না।
তিনি বলেন, দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। পরিবারের কেউ আমাদের মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকি। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। সে নিজেও অসুস্থ ছিল। ১০ বছর ধরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। কৃত্রিম পায়ে খুড়িয়ে চলত। মাসুদের কী দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত, অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরত।
রবিবার দুপুরে রামেক হাসপাতালে মাসুদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কীভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে-এটি তারা বুঝতে পারছেন না!
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম ও গণপিটুনি। তবে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
নগরীর মতিহার থানার ওসি আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার পর্যন্ত মাসুদের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ থানায় এজাহার দেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।