বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটস (Bill Gates) তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তির মাত্র ১ শতাংশ রেখে বাকি সব বিলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি চাই না মৃত্যুর পর মানুষ কেবল বলুক, আমি বড়লোক ছিলাম। বরং চাই, আমার সম্পদ মানবতার কাজে ব্যয় হোক।”

বিল গেটসের জীবনের শুরু ও Microsoft-এর উত্থান
১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে জন্ম বিল গেটসের। শৈশব থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি অগাধ টান ছিল তাঁর। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই কোডিং শুরু করেন। লেকসাইড স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেন নতুন উদ্ভাবনের স্বপ্নে।
বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে ১৯৭৫ সালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন Microsoft। সেই ছোট্ট সংস্থাই একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার জায়ান্টে পরিণত হয়। একসময় টানা ১৮ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ছিলেন গেটস।
বিলিয়ন ডলার দান, সন্তানদের জন্য সামান্য অংশ
বিল গেটস বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্ত চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তিনি ঘোষণা করেছেন, সন্তানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে মাত্র ১ শতাংশ, বাকি যাবে Bill & Melinda Gates Foundation-এর দান তহবিলে।
তাঁর তিন সন্তান—জেনিফার ক্যাথরিন গেটস, ররি জন গেটস এবং ফোবি অ্যাডেল গেটস—নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। গেটসের মতে, তাঁদের জীবনে এগোতে পিতৃ-সম্পদের প্রয়োজন নেই, বরং তাঁদের নিজস্ব মেধাই যথেষ্ট।
গেটস ফাউন্ডেশনের মানবিক কাজ
২০০০ সালে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত Bill & Melinda Gates Foundation আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানবকল্যাণমূলক সংস্থা। আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে এই সংস্থা। ম্যালেরিয়া, পোলিও, এইচআইভি-সহ মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়েছে বিলিয়ন ডলার।
সম্প্রতি ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিল গেটস ঘোষণা করেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে তিনি তাঁর সব সম্পদ দান করবেন। বিশেষ করে আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রশংসা ও সমালোচনা
গেটসের এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বের একাংশ অভিভূত হয়ে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এত বড় সিদ্ধান্ত কোনও একক ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে হওয়া উচিত। তবুও, বিল গেটসের বক্তব্য স্পষ্ট—“আমি এই সম্পদের কেবল এক জন অভিভাবক। তাই মানবতার স্বার্থে সঠিকভাবে ব্যয় করাটাই আমার দায়িত্ব।”
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ও ভেন্যু ঘোষণা, অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান ট্রাম্প
শেষ অধ্যায়ে এক মহৎ লক্ষ্য
শীঘ্রই ৭০ বছরে পা দিচ্ছেন গেটস। বয়সের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি স্বপ্ন দেখছেন আগামী দুই দশকে মানবকল্যাণে তাঁর সম্পদের সর্বস্ব খরচ করে যাওয়ার। মজার ছলে বলেন, “আমার শুধু হ্যামবার্গার খাওয়ার মতো কিছু টাকা থাকলেই চলবে, বাকিটা থাকুক আফ্রিকার মানুষের জন্য।”
বিল গেটসের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বিশ্বের ইতিহাসে এক নজির। সম্পদ জমিয়ে না রেখে তিনি প্রমাণ করলেন, প্রকৃত উত্তরাধিকার অর্থ নয়, বরং মানবতার জন্য রেখে যাওয়া কাজই আসল সম্পদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।