নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জুবেদা খাতুনের কেনা জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন তার ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের ১০২ শতাংশ জমি সন্ত্রাসী বাহিনীর সশস্ত্র মহড়ার মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি জবর দখল করে ভাওয়াল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। গাজীপুরের বাড়ইপাড়া মৌজার নলজানি গ্রামের ঐ জমি উদ্ধারে নানা জনের দ্বারস্থ হয়েছেন জুবেদা খাতুনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হক ও তার ভাই-বোনেরা। কিন্তু সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ক্ষমতার কাছে বারবার হেরে গেছে জমি হারানো ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।
জমি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা পর্যন্ত করার সাহস পাননি তারা। অবশেষে রোববার (২ মে) ভাওয়াল রিসোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সমনজারীরও নির্দেশ দিয়েছেন। গাজীপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ নাজমুন নাহারের আদালতে মামলাটি করা হয়।
মামলার বাদী হয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- ঢাকার কলাবাগান থানার সার্কুলার রোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.বজলুল হক, তার ভাই ডা. মো. সিরাজুল হক, বোন সামসুন্নাহার এবং ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মো. জাহিদুল হক, নিশাত তসলিম ও পারভীন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সরকার বলেন, এ মামলায় বিবাদীরা হলেন ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা’র প্রতিষ্ঠাতা ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেল, স্থানীয় উত্তর বানিয়ার চালা গ্রামের প্রয়াত শাহজাহানের ছেলে রফিকুল ইসলাম মাস্টার, ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পার ম্যনেজার সুমন ও মো. কামরুল ইসলাম। একইসঙ্গে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে।
জানা গেছে, সিএস রেকর্ডমূলে ঐ জমির মালিক ছিলেন সৈয়দ আলী। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে তার কাছ থেকে নলজানি গ্রামের ১০২ শতাংশ জমি কিনে নেন আব্দুল হাই ও তার মেয়ে জুবেদা খাতুন। কেনার পর থেকেই পরিবারটি জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভাওয়াল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জমিটি জবর দখল করে নেয়।
স্থানীয়রা জানান, মামলার বিবাদী স্থানীয় উত্তর বানিয়ার চালা গ্রামের প্রয়াত শাহজাহানের ছেলে রফিকুল ইসলাম মাস্টার এ জমি জবর দখলে সহযোগিতা করেন। মা ও নানার কেনা জমি উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছেই গিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোথাও পাত্তা পাননি। স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষমতাকে পুঁজি করে ভাওয়াল রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিক হয়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। জমি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সাবেক এ পুলিশ প্রধানের ভয় দেখানো হতো। অবশেষে রোববার তারা গাজীপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ নাজমুন নাহারের আদালতে এই মামলা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সরকার বলেন, আদালত শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে সমনজারির নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৬ নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেছেন।
এদিকে বনবিভাগের ৬.৭০ একর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এ ভাওয়াল রিসোর্ট। শিগগিরই বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারে অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।
বনবিভাগ সূত্র বলছে, ভাওয়াল রিসোর্টের ভেতরে বনের অন্তত ৬.৭০ শতাংশ জমি রয়েছে। জমি দখল করে নেয়ার সময় বনের কর্তারা ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। রক্ষা করতে পারেনি বনের জায়গা। অবশ্য তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছিলেন। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে ভাওয়াল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এক মামলায় এ জমির বিষয়ে একটি স্টে অর্ডার করে রাখে। ফলে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি। তবে জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ আইনি লড়াই চালিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা জজ আদালতের স্টে অর্ডারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে আপিল করে। গত বৃহস্পতিবার আদালত আপিলটি গ্রহণ করে স্টে অর্ডার খারিজ করে।
তিনি বলেন, এখন আর বনের ঐ জায়গা উদ্ধারে আর কোনো আইনি জটিলতা নেই, নেই কোনো বাধা। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।