জুমবাংলা ডেস্ক : আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়াই চাকরি থেকে অপসারণ সংক্রান্ত দুদকের ৫৪(২) বিধি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কমিশনকে এই নির্দেশনা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, ক্ষমতাধর আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে জড়ায়, তাদের নিয়েই কাজ করে দুদকের কর্মকর্তারা।
এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে সমাজের নিরপরাধ উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যেন কোনভাবেই ভিকটিম না হন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূল রায়টি লিখেছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) এই রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম দুদকের ৫৪(২) বিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ১২ দফা পর্যবেক্ষণ বা গাইডলাইন অনুসরণ করতে দুদককে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এসব গাইলাইনে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সততা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে এই বিধি দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে। এজন্য একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে আইনের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এই বিধি দুদকের প্রয়োগ করা উচিত। এছাড়া এই বিধিকে কখনোই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
রায়ে বলা হয়েছে, ৫৪(২) বিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কারণ দর্শানোর সুযোগ রাখা হয়নি। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে কি কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে সেই কারণ বরখাস্ত সংক্রান্ত নথিতে উল্লেখ রাখতে হবে। এছাড়া পিক এন্ড চুজের ভিত্তিতে যেন এই বিধি কখনো প্রয়োগ করা না হয় তাও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে দুদকের কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একজনকে অবশ্যই কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করা উচিত বলেও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, এই বিধি ন্যায় বিচারের যে মতবাদ তাকে আঘাত করেনি। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে এখানে সর্বসাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই যাতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়, সেজন্য এই বিধি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে দুদকের চাকরি বিধিতে। চাকরির শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় বিধিবিধান করে থাকে।
দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, ৫৪(২) বিধিকে অসাংবিধানিক বলার সুযোগ নাই। রায়ে সেটাই বলা হয়েছে। আইনগত কর্তৃত্ববলে দুদক সতর্কতার সঙ্গে এই বিধি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধিতে বলা হয়েছে, এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকুরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’
এই বিধিমালার ক্ষমতাবলে মো. আহসান আলী নামের দুদকের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। ওই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের রায়ে হাইকোর্ট ৫৪(২) বিধি বাতিল ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এই রায় পুনঃবির্বেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন করে দুদক। পুনরায় আপিলের অনুমতি পায় দুদক। সেই আপিলের রায়ে বহাল থাকে ৫৪(২) বিধি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।