নজরুল ইসলাম : স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের ৫১ বছরে ঢাকায় এ নিয়ে ১৬ জন ভারতীয় হাইকমিশনার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ হাইকমিশনারই ঢাকায় দুই বছরের বেশি সময় নয়াদিল্লির দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যতিক্রম ঘটেছে সদ্য বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশের ক্ষেত্রে।
রীভা দেড় বছর ঢাকায় দায়িত্ব পালন শেষ করার মধ্যেই তাকে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ পদে যোগ দিতে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে ফিরে গেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি। দেশে ফিরে শনিবার এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
টুইটে রীভা লিখেছেন, ‘বিদায় বাংলাদেশ। সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যারা আমার এই ফলদায়ক সফরে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ থেকে অনেক স্মৃতি নিয়ে ফিরেছি, বিশেষ করে তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা।’
গত বছরের মার্চে ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে ঢাকায় আসেন রীভা গাঙ্গুলী। নয়া দিল্লির হয়ে ঢাকায় খুব ভালোভাবেই দায়িত্ব সামলিয়েছেন রীভা। তবে দায়িত্ব পালনের শেষের দিকটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পাননি মর্মে দিল্লি এবং ঢাকার গণমাধ্যমগুলোতে খবর চাউর হয়েছিল।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তো এ নিয়ে রীতিমতো বিভিন্ন প্রতিবেদনসহ সম্পাদকীয় কলামে ঢাকা চীনের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে মর্মে ঢাকায় রীভা গাঙ্গুলীর চেয়ে আরও শক্তিশালী কূটনীতিকের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে।
শুধু তাই নয়, দেশটির অনেক বিশ্লেষকের ভাষ্য ছিল, ঢাকায় হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মতো শক্তিশালী কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনের পর সেখানে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিতে আরও দায়িত্বশীল কূটনীতিকের প্রয়োজন।
সরকারপ্রধানের সঙ্গে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ না হওয়ার প্রশ্নে যখন উভয় দেশের গণমাধ্যম সরগরম, ঠিক সেই মুহূর্তে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে একটি নোটভারবাল পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট চাওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনারকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষাৎ দেওয়া হয়।
ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাক্ষাতে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঠানো চিঠি হস্তান্তর করেন রীভা। বৈঠকে ভারতের ‘প্রতিবেশী আগে’ এই নীতির আলোকে বাংলাদেশের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন রীভা।
তাদের আলোচনায় আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদ্যাপনের বিষয়টি ঠাঁই পায়।
এদিকে গতকাল সোমবার হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে ঢাকায় পৌঁছেছেন নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বাংলাদেশে আসেন বলে জানায় ভারতীয় হাইকমিশন।
চেকপোস্ট থেকে ঢকায় রওনা হওয়ার আগে হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশরীদারিত্ব বাড়ানো নিয়ে কাজ করবেন বলেও গণমাধ্যমে আভাস দেন নতুন হাইকমিশনার।
সূত্র বলছে, আগামী ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করবেন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
রীভাকে সবচেয়ে কম সময়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদকে অফিশিয়ালি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ প্রায় দুই দশক আগে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ঢাকায় এসেছিলেন। প্রায় ১৭ বছর আগে ঢাকার সঙ্গে পরিচয় হওয়া রীভা গাঙ্গুলী গত মার্চে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে ঢাকায় আসার পর দ্বিতীয়বাবের মত বাংলাদেশকে, এদেশের মানুষকে, সংস্কৃতিকে আরও কাছ থেকে দেখেছেন। দীর্ঘ বিরতিতে এবার বাংলাদেশের পরিবর্তন মুগ্ধ করেছে তাকে।
ঢাকায় প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন সুবিমল দত্ত (১৯৭২-১৯৭৪), এরপর ঢাকায় আসেন এস সেন (১৯৭৪-১৯৭৬), কে পি এস মেনন (১৯৭৭-১৯৭৯), মুচকুন্দ দুবে (১৯৭৯-১৯৮২), আই পি খোসলা (১৯৮২-১৯৮৫), আই এস চাড্ডা (১৯৮৫-১৯৮৯), কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন (১৯৮৯-১৯৯২), কে রগুনাথ ১৯৯২-১৯৯৫), দেব মুখার্জি (১৯৯৫-২০০০), এম এল ত্রিপাটি ২০০০-২০০৩, ভিনা শিকরি (২০০৩-২০০৬), পি আর চক্রবর্তী (২০০৭-২০০৯), রাজিত মিত্র (২০০৯-২০১১), পঙ্কজ স্মরণ (২০১২-২০১৫), হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা (২০১৬-২০১৯) এবং সবশেষ রীভা গাঙ্গুলী দাশ ২০১৯ মার্চ থেকে ২০২০ সেপ্টেম্বর।
এদের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সময় তথা চার বছর করে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনজন হাইকমিশনার। তারা হলেন-আই এস চাড্ডা, কৃষ্ণা শ্রী নিবাস ও দেব মুখার্জি।
সূত্র : ঢাকাটাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।